ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় রবিবার (২৬ অক্টোবর) আবুল কালাম আজাদ নামে এক যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরও একই স্থানে বিয়ারিং প্যাড খুলে গিয়েছিল, তবে তখন কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুইবারের এই ঘটনা মেট্রোরেল ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও কাঠামোগত স্থায়িত্ব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই দুর্ঘটনা মূলত রেললাইনের বাঁকানো অংশে অতিরিক্ত চাপ ও সম্ভাব্য নকশাগত ত্রুটির ফল। বুয়েটের সাবেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহসানুল কবির বলেন, “বাঁকানো অংশে বিয়ারিং প্যাডের স্থাপন মান আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। প্যাডটি সঠিকভাবে সংযুক্ত না হলে একই স্থানে বারবার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
ড. হাদিউজ্জামান, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক, বলেন, “বিয়ারিং প্যাড ট্রেনের ওজনের চাপ সামলানোর পাশাপাশি কম্পন শোষণ করে। যদি এটি অকেজো বা নষ্ট হয়, ভায়াডাক্টের জয়েন্ট ও সাপোর্ট পিলারের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। এ কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ইনস্টলেশনের আগে কঠোর পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান অপরিহার্য।”
বিয়ারিং প্যাডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা:
-
ট্রেনের ওজন বহন করা।
-
চলাচলের সময় সৃষ্ট কম্পন শোষণ করা।
-
রেললাইনের নমনীয়তা বজায় রাখা, বিশেষ করে বাঁকানো অংশে অতিরিক্ত চাপ সামলানো।
-
নষ্ট হলে যাত্রী ও পথচারীর জন্য দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি।
দুর্ঘটনার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিভিন্ন বিভাগের প্রকৌশলী, ডিএমটিসিএল-এর প্রকল্প পরিচালক ও উপ-সচিবসহ বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, উন্নত প্রযুক্তি, চাপ-সহনশীল উপকরণ, মনিটরিং সিস্টেম, বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা সার্টিফিকেশন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও বীমা ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।
ফার্মগেটের এই দুর্ঘটনা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, নিরাপত্তা কেবল প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, এটি মানবিক দায়িত্বও বটে। সাধারণ যাত্রী এবং পথচারীর জীবন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেতে হবে।
পাঠকের মন্তব্য