বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন এক ভিন্ন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে। দলটি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক জোটে যাচ্ছে না।
দলীয় সূত্র বলছে, সম্ভাব্য আসন সমঝোতা ও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার বিষয়টি খোলা রেখেই এনসিপি দুই দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে। তবে এনসিপির নেতারা পরিষ্কার করেছেন—সব সিদ্ধান্ত হবে জুলাই জাতীয় সনদ ও দলীয় প্রতীকের আইনি সুরাহার পর।
দলীয় প্রস্তুতি ও প্রার্থী তালিকা
ইতিমধ্যেই এনসিপি নির্বাচনের জন্য সক্রিয় তৎপরতা শুরু করেছে। প্রায় অর্ধশত সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, জনসম্পৃক্ত কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন, এবং সামাজিক কাজে অংশ নিচ্ছেন।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন,
“জুলাই সনদ ও দলীয় প্রতীকের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ১৫০ থেকে ১৬০ জন প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।”
দলীয় সূত্র জানায়, এনসিপি দেড় শতাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ
রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে—এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে প্রাথমিক আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন,
“এনসিপির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হব কি হব না, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। রাজনীতিতে সবকিছু সময়ের সঙ্গে পরিষ্কার হবে।”
এনসিপির এক সিনিয়র নেতা জানান, আলোচনায় ২০টি আসনে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছে, যার মধ্যে ঢাকার অন্তত চারটি আসনে এনসিপির প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকাগুলো—যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা ও সাভার—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় এনসিপির আন্দোলনের “হটস্পট” হিসেবে পরিচিত ছিল।
জামায়াতের সঙ্গেও বোঝাপড়া চলছে
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন,
“এনসিপির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। প্রায়ই জুলাই সনদসহ রাজনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা হয়।”
এনসিপির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক দাবি করেন, জামায়াতও নির্বাচনে এনসিপিকে সঙ্গে রাখতে চায়, এমনকি বিএনপির চেয়েও বেশি আসন দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে। যদিও এনসিপি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতিতে যায়নি।
সম্ভাব্য নতুন জোট ও বিকল্প সমীকরণ
এনসিপির মধ্যেই এখন বিভিন্ন মত ও দিক রয়েছে। দলের একটি অংশ বিএনপি বা জামায়াতের বাইরে অন্য তিনটি দল—গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন—এর সঙ্গে যৌথ জোটের চিন্তা করছে।
তবে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন,
“যদি অবস্থানগত ঐক্য হয়, তাহলে যেকোনো দলের সঙ্গেই জোট বা সমঝোতার বিষয়ে আমরা এখনো ওপেন রয়েছি। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই।”
রাজনীতির নতুন সমীকরণের পথে এনসিপি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এনসিপি এখন কৌশলগত নীরবতা ও যোগাযোগনীতির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। তরুণ নেতৃত্ব ও জুলাই সনদভিত্তিক রাজনৈতিক দর্শন তাদের আলাদা করে তুলেছে।
অন্যদিকে, বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা পরিস্থিতি বুঝে সম্ভাব্য আসন সমঝোতার পথ খোলা রাখছেন।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, এনসিপির ভূমিকাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক মাঠে।
পাঠকের মন্তব্য