জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রশাসন ও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে রদবদল ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কিছু কর্মকর্তা ও উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কাল থেকে শুরু করে প্রশাসনে যেসব পদে ’৮২ ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারা ভোটের পরিবেশ এবং প্রশাসনিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদে থাকা কর্মকর্তারা তাদের পক্ষে কাজ করছেন। বিএনপি অভিযোগ করেছে, কিছু কর্মকর্তা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে কাজ করছেন। অন্যদিকে জামায়াত বলছে, কিছু কর্মকর্তা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন। এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও একই অভিযোগ তুলেছে।
প্রশাসনে এই বিতর্ক মূলত পদায়ন, বদলি এবং পদোন্নতি প্রক্রিয়া নিয়ে। ’৮২ ব্যাচের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে অবসরে থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের সময় তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যাচের কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, পরিকল্পনা কমিশন ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনেও তাদের প্রভাব রয়েছে।
সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “সরকারের দোদুল্যমানতা, যোগ্য লোক না পাওয়া এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রশাসনে অনাস্থা তৈরি করেছে। যেসব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা সরকারের পরামর্শক হিসেবে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি।”
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা হারানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “উপদেষ্টা, সচিব এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই তাদের নিয়োগ পুনর্বিবেচনা করা উচিত।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। সরকারের উচিত এই প্রক্রিয়ায় কেয়ারটেকার হিসেবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনও ধরনের পক্ষপাতিত্ব দেখা না দেয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানাচ্ছে, “প্রশাসনের দলীয়করণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ক্ষমতায় থাকা দলগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের প্রভাবের মধ্যে আনে। বর্তমানে যারা অভিযোগ করছেন, তাদের উচিত এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া।”
প্রশাসনে এই বিতর্ক ও অনাস্থা জনমতের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং সাধারণ জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বশীল পদে থাকা কর্মকর্তাদের সতর্ক এবং নিরপেক্ষ হওয়া অপরিহার্য।
পাঠকের মন্তব্য