অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এবার একটি বড় পরিবর্তন আনছে সরকার—বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের বেতনও অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে এই কাঠামোয়।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) মহাসচিব মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “আমরা বর্তমানে বেতন কমিশনের কাছে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তাবনা প্রস্তুত করছি। এই প্রস্তাবে সার্বিকভাবে সর্বনিম্ন বেতন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হচ্ছে।”
মানবিক জীবনের বেতন কাঠামো
মো. আলমগীর বলেন, “একজন সাধারণ নাগরিকের মানবিক জীবনযাপনের জন্য যে ন্যূনতম বেতন প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এই উদ্যোগ। এটি বিলাসী জীবনযাপনের জন্য নয়, বরং পরিবারের চারজন সদস্যসহ একজন মানুষের মৌলিক জীবনধারণের উপযুক্ত বেতন নিশ্চিত করার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি-বেসরকারি ভেদাভেদ নয়, নাগরিকের মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতেই বেতন নির্ধারণ হওয়া উচিত। ন্যায্য বেতন না পেলে বৈষম্য ও দুর্নীতি বাড়বে, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।”
সরকারি খাতেও দ্বিগুণ বেতনের সুপারিশ
সরকারের সর্বশেষ ঘোষণায় বলা হয়েছে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য ন্যায্য, বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকরী বেতন কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে গঠিত বেতন কমিশনের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে।
কমিশন অনলাইনে সংগৃহীত সাধারণ মানুষের মতামত ও সুপারিশ যাচাই-বাছাই করছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিশন প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, নতুন কাঠামোয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতের ক্ষেত্রেও মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক, বাজারমূল্য ও জীবনযাত্রার খরচ বিবেচনা করে বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে।
অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবের আশায়
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ন্যায্য বেতন কাঠামো শুধু কর্মচারীর জীবনমানই নয়, দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও বাজার প্রবাহেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. রিয়াজুল করিম বলেন, “যদি ন্যূনতম মজুরি ও সরকারি-বেসরকারি বেতন কাঠামো একসাথে সমন্বিত হয়, তবে তা কর্মসংস্থানে স্থিতিশীলতা আনবে এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে।”
মানবিক মর্যাদা ও জীবনমানের নতুন দিগন্ত
এই উদ্যোগকে অনেকেই মানবিক অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের সূচনা হিসেবে দেখছেন। সরকারের লক্ষ্য কেবল বেতন বাড়ানো নয়, বরং একটি সমতাপূর্ণ, সম্মানজনক ও দুর্নীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ তৈরি করা।
এফবিসিসিআই বলছে, যদি এই কাঠামো কার্যকর হয়, তবে বেসরকারি খাতেও কর্মীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে। এটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো হয়ে উঠবে।
পাঠকের মন্তব্য