![]()
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের একটি বাসা থেকে স্বর্ণময়ী বিশ্বাস (২৮) নামে এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা স্ট্রিম’-এর গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা স্বর্ণময়ী এক বছর আগে ঢাকা স্ট্রিমে যোগদান করেন এবং ঢাকায় তার বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। তার বড় ভাই সৌরভ বিশ্বাস জানান, দীর্ঘ সময় ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় চাবি দিয়ে খুলে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তাকে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন যে পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা দায়ের করা হয়নি এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে এসআই অমিত চাকমা উল্লেখ করেন যে মৃতের দুই হাতে ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কাটা একাধিক দাগ এবং গলায় কালো দাগ রয়েছে।
স্বর্ণময়ীর সহকর্মী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি তিনি সহকর্মী কবি ও সাংবাদিক আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, যেখানে আরও ২১ জন সহকর্মী প্রমাণ হিসেবে স্বাক্ষর করেছিলেন। আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে অনুপযুক্ত দেহভঙ্গি, অশোভন ভাষা ব্যবহার, ফ্লার্ট, হেনস্তা, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন, গভীর রাতে ফোন/মেসেজ, অরুচিকর মন্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো ৯ ধরনের অভিযোগ আনা হয়। সহকর্মীদের অনেকে ধারণা করছেন যে, অভিযোগের বিচার না পেয়ে মানসিক আঘাত ও ক্ষোভ থেকেই স্বর্ণময়ী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। যদিও ঢাকা স্ট্রিম কর্তৃপক্ষ অভিযোগের ভিত্তিতে আলতাফ শাহনেওয়াজকে বার্তাকক্ষ থেকে প্রত্যাহার করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তবে অভিযোগকারীদের অনেকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচারণায় অভিযোগ ওঠে যে প্রধান সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ অভিযুক্তকে শাস্তি না দিয়ে পুনর্বহাল করেন, যা স্বর্ণময়ী মেনে নিতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে আলতাফ শাহনেওয়াজ বা ইফতেখার মাহমুদ কেউই সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি, যদিও ইফতেখার মাহমুদ লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন।
আলতাফ শাহনেওয়াজ ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা বিভাগের প্রধান এবং এর আগে দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা স্ট্রিমের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, আলতাফ শাহনেওয়াজকে তাৎক্ষণিকভাবে বার্তাকক্ষ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং তদন্তে তার কিছু অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রমাণ পাওয়ায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়, একইসঙ্গে একটি আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে অভিযোগকারীরা এসব সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। তবে সহকর্মী ও অন্য সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেন যে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি এবং অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচণার অভিযোগে আলতাফ শাহনেওয়াজকে বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য