জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রস্তুত জুলাই জাতীয় সনদে সই করেছে ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এই সনদে সই করেন বিভিন্ন দলের ৪৮ জন নেতা।
মোট ২৫টি দল ও জোট অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও, একটিমাত্র দল সনদে সই করেনি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন।
সই করেছে যেসব দল ও জোট
সনদে সই করা ২৪ দলের মধ্যে ১৮টি নিবন্ধিত, আর ৪টি নিবন্ধনহীন। এছাড়া দুটি জোট— ১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট— থেকেও নেতারা সই করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে ছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাকের পার্টি, লেবার পার্টি, নেজামে ইসলাম, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাতীয় গণফ্রন্ট, এনডিএম, ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
প্রত্যেক দল ও জোটের পক্ষ থেকে দুজন করে নেতা সনদে স্বাক্ষর করেন।
কারা সই করেনি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া ছয়টি দল শেষ পর্যন্ত সনদে সই করেনি। এগুলো হলো—
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরাম।
এনসিপি আগেই জানায়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি স্পষ্ট না হলে তারা সই করবে না। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের রাজি করানোর প্রচেষ্টা চললেও তারা শেষ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকে।
অন্যদিকে, চার বাম দল এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তাদের সংশোধনী প্রস্তাব না মানা, ইতিহাস বিকৃত উপস্থাপন, এবং সব দলের ঐকমত্যের অভাবের কারণে তারা সনদে সই করবে না।
গণফোরাম অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকলেও, সংশোধিত খসড়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় তারা সই থেকে বিরত থাকে।
বিশ্লেষকদের মত
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন,
“৩০টি দল ও জোট আলোচনায় অংশ নিয়েছিল, তার মধ্যে ২৪টি সই করেছে— সংখ্যার দিক থেকে এটা খারাপ নয়। তবে এনসিপির অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো, কারণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা তরুণেরাই দলটি গঠন করেছিল।”
তিনি আরও বলেন,
“বাংলাদেশে সব কিছুকে ‘জাতীয়’ আখ্যা দেওয়ার প্রবণতা আছে। কিন্তু রাজনীতি এখন বাস্তবতার খেলা— এখানে আদর্শ নয়, প্রভাবই মুখ্য।”
পটভূমি
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ। দুই ধাপে মোট ৬৩টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রণয়ন করা হয় জুলাই সনদ।
বর্তমানে দেশে ৫২টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় ও ১৪-দলীয় জোটকে আলোচনায় ডাকা না হওয়ায় তারা অনুপস্থিত ছিল। ঐকমত্য কমিশন বলছে, এই প্রক্রিয়া মূলত ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা দলগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য