চীনের কমিউনিস্ট পার্টি একযোগে দেশের নয়জন শীর্ষ জেনারেলকে বরখাস্ত ও পদচ্যুত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক দশকের মধ্যে এটি চীনের সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহে তদন্তাধীন। তাদের সবাই তিন তারকা জেনারেল এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
যদিও পদক্ষেপটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতি দমন অভিযান বলা হয়েছে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটি আসলে রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণ। আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের আগে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের ক্ষমতা প্রদর্শন ও ভেতর থেকে দলকে ‘পরিশুদ্ধ’ করার কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে।
শুদ্ধিকরণ না রাজনৈতিক বার্তা?
চীনা রাজনীতি বিশ্লেষক ও এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ফেলো নেইর থমাস বিবিসি চাইনিজকে বলেন,
“শি চিনপিংয়ের শুদ্ধিকরণ মূলত তার ক্ষমতা সুসংহত করার উপায়। তিনি অবিশ্বস্ত ক্যাডারদের সরিয়ে দিতে চান, যেন পার্টি দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে।”
তার মতে, এই পদক্ষেপ চীনের প্রশাসনকে আরও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণনির্ভর ও কঠোর করে তুলবে।
বরখাস্ত জেনারেলদের তালিকা
১. হি ওয়েইডং – সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান
২. মিয়াও হুয়া – সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক
৩. হে হংজুন – সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের নির্বাহী উপপরিচালক
৪. ওয়াং জিউবিন – জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের নির্বাহী উপপরিচালক
৫. লিন জিয়াংইয়াং – ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার
৬. কিন শুতং – সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার
৭. ইয়ুআন হুয়াজি – নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার
৮. ওয়াং হৌবিন – রকেট ফোর্স কমান্ডার
৯. ওয়াং চুনিং – আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার
এই তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত নাম হি ওয়েইডং, যিনি প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের পর সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। মার্চ মাসের পর থেকে তার জনসমক্ষে না দেখা যাওয়ায় নানা জল্পনা ছিল, এবার সেটিই সত্য হলো।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,
“এই ৯ ব্যক্তি দলের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছেন এবং দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহ রয়েছে।”
তাদের বিরুদ্ধে সামরিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। চীনা সরকার বলছে, এই অভিযান দেশটির সেনাবাহিনীতে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।
এর আগে দুই সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংঘে ও লি শাংফু-এর বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি রকেট ফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়াও একই ধারাবাহিকতার অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পাঠকের মন্তব্য