![]()
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে, পথ হতে পারে ভিন্ন, কিন্তু আমাদের সকল স্রোতের লক্ষ্য একটাই—একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত **‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’** স্বাক্ষরের বর্ণাঢ্য আয়োজনে সূচনা বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে, পথেরও পার্থক্য থাকবে। কিন্তু মোহনায় এসে এক হতে হবে। যেন আমরা সবাই বলতে পারি—আমাদের স্রোত অনেক, কিন্তু মোহনা একটাই—একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমরা সকলেই স্বৈরাচারবিরোধী অবস্থানে এক হয়ে দাঁড়াবো।”
এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক “অভূতপূর্ব ও অনন্য মুহূর্ত” এসেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটি কোনো সাময়িক অর্জন নয়; বরং দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই ও সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।”
ড. আলী রীয়াজ বলেন, “এই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার একটি চুক্তি নয়, এটি নাগরিকদের সঙ্গে দলগুলোর এবং রাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের সামাজিক চুক্তি। যার প্রতিটি বাক্যে, প্রতিটি ধারায় দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতিফলন রয়েছে।”
তিনি স্মরণ করেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন ও আহত হয়েছেন, তাঁদের বলিদানেই এই সনদের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। “এটি কেবল একটি রাজনৈতিক দলিল নয়,” বলেন তিনি, “বরং এটি একটি স্মারক—যেটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া একদফা দাবির সফল পরিণতি এবং ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানে জনগণের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের এই প্রচেষ্টা একদিনেই সফল হবে না। তবে আজকের এই দলিল ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ করে দিয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে।”
স্বাক্ষরের বর্ণাঢ্য আয়োজন
বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কুচকাওয়াজের মাধ্যমে মঞ্চে আগমন করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
এরপর ড. রীয়াজ সূচনা বক্তব্য দেন এবং বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যবৃন্দ—বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাংবাদিক মনির হায়দার।
এদিনের আয়োজনে ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন:
-
শহীদ পরিবারের সদস্যরা,
-
সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা,
-
আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ,
-
এবং বিভিন্ন দেশের বিশেষ অতিথিরা।
“ভবিষ্যতের পথরেখা” প্রদর্শন
সনদ স্বাক্ষর শেষে প্রদর্শিত হয় একটি সাত মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র, “ভবিষ্যতের পথরেখা”, যেখানে তুলে ধরা হয়:
-
গত ষোল বছরের দুঃশাসন ও ফ্যাসিবাদ,
-
গুম-খুন,
-
শাপলা চত্বর ও পিলখানা হত্যাকাণ্ড,
-
এবং শেষ পর্যন্ত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট।
ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের পর জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা, এবং মঞ্চের সামনে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন।
ড. আলী রীয়াজের ভাষায়, “আজ আমরা যে দলিলের সাক্ষী হলাম, তা শুধু অতীতের ইতিহাস নয়—এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি দিকনির্দেশনা, যাতে বাংলাদেশ একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে পারে।”
পাঠকের মন্তব্য