ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম। শনিবার (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে তিনি টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে পরিবার, দৃক ও পাঠশালা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সহকর্মীরা তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। আবেগঘন পরিবেশে শহিদুল আলম সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন,
“ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত সবার লড়াই ও সংগ্রাম চলবে।”
তিনি তুরস্ক সরকারের সহায়তা এবং প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি তিনি বিশেষভাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান তাঁর কূটনৈতিক ও মানবিক প্রচেষ্টার জন্য।
আটক থেকে মুক্তি পর্যন্ত যাত্রা
ফিলিস্তিনের গাজাগামী “ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (FFC)”–এর মানবিক সহায়তা বহনকারী নৌবহরে যোগ দিয়েছিলেন শহিদুল আলমসহ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী। ৮ অক্টোবর ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলি নৌবাহিনী এই জাহাজটি আটক করে এবং শহিদুল আলমসহ সবাইকে কেৎজিয়েত কারাগারে পাঠানো হয়।
শহিদুল আলমের আটক হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ সরকার দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জর্ডান, মিসর ও তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেয়।
এর ফলেই শুক্রবার (১০ অক্টোবর) তিনি ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত হন। পরে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছে বিশ্রাম নেন এবং সেখান থেকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
মানবিক লড়াইয়ের প্রতীক শহিদুল আলম
৬৯ বছর বয়সী শহিদুল আলম দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে আসছেন।
তিনি ফটো সংস্থা দৃক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠশালা এবং আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলা–এর প্রতিষ্ঠাতা।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটকের ঘটনায় বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও প্রখ্যাত আলোকচিত্রী মহলে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
দেশে ফেরার পর বার্তা
দেশে ফিরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে শহিদুল আলম বলেন,
“এই লড়াই কেবল ফিলিস্তিনের নয়, মানবতার লড়াই। আমি কৃতজ্ঞ সেই সকল মানুষদের প্রতি, যারা বন্দি অবস্থায়ও আমার পাশে থেকেছেন এবং আমার মুক্তির জন্য আওয়াজ তুলেছেন।”
তিনি আরও বলেন,
“মানবতার বিরুদ্ধে অন্যায় ও দমননীতির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গাজায় মানুষের দুর্ভোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারি সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহিদুল আলমের মুক্তির বিষয়ে নিজে তদারকি করেন এবং তুরস্ক সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত করেন।
তুরস্ক ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলেই দ্রুত তার মুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
শহিদুল আলমের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে “ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (FFC)” এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
তারা বলেন, ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে গিয়ে যে ধরনের বাধা তৈরি করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
শেষ কথা
দেশে ফিরে শহিদুল আলমের চোখে এখনো সংগ্রামের দীপ্তি।
তার মতে, “মানবতার লড়াই থেমে থাকতে পারে না, যতক্ষণ না নির্যাতিতের মুখে হাসি ফিরে আসে।”
বাংলাদেশের মানবিক কণ্ঠস্বর হিসেবে শহিদুল আলমের এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ব্যক্তিগত মুক্তি নয়—এটি মানবতার প্রতি এক বিশ্বজনীন আহ্বান।
পাঠকের মন্তব্য