মিসরের শারম আল-শেখে তিন দিন স্বাধীন মধ্যস্থতা শেষে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে—মধ্যস্থতাকারী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর ও তুরস্ক। ঘোষণার পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, আরব বিশ্ব ও সমগ্র বিশ্বে যুদ্ধবিরতির ঢেউ নেমে এসেছে।
সংক্ষেপে—কে জিতল, কে হারল? দুইটি সহজ মানদণ্ডে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ফলাফল স্পষ্ট:
প্রথম মানদণ্ড: উৎসব কার পক্ষে?
ফিলিস্তিনি নাগরিকরা গাজা ও বিভিন্ন স্থানে উল্লাস করছে—আল আকসা হাসপাতালের সামনে, খান ইউনিসে মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ পালিত হচ্ছে; বহু এলাকায় মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে স্থানীয়রা। অপর দিকে অনেক ইসরায়েলি সাধারণ জনগণের মধ্যে নীরবতা ও হতাশা বিরাজ করছে; কিছুockets পরিবারের জিম্মি মুক্তির আশা থাকলেও সামগ্রিকভাবে তেল আবিবে উৎসব নেই। এই দিক থেকে দেখা যায়—মানুষীয় সাহারা, খাদ্য, চিকিৎসা ও পরিবারের পুনর্মিলন পেলেই গাজাবাসীর আনন্দের উৎস নিহিত।
দ্বিতীয় মানদণ্ড: হামাস–ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য কতটা অর্জিত হয়েছে?
হামাসের মূল লক্ষ্য ছিল—ফিলিস্তিনকে পুনরায় গ্লোবাল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে তোলা, ফিলিস্তিনবিমূচ্যকরণ রোধ এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা। এই মানদণ্ডে বেশ কিছু লক্ষ্য সফল হয়েছে: বিশ্বব্যাপী সোলিডারিটি তীব্রতা পেয়েছে, ফিলিস্তিনি ইস্যু আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়েছে, ও আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মতো স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার উপর চাপ পড়েছে। ফলত—হামাস ও গাজার মুক্তিকামী মানুষ রাজনৈতিক নির্যাসে শক্তি জোগাতে পেরেছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল—বন্দিদের মুক্তি, হামাসকে মার্যাদায় ভেঙে দেওয়া এবং গাজাকে ভবিষ্যতে কোনো হুমকি থেকে মুক্ত করা। এই লক্ষ্যগুলোর বড় অংশ হাসিল হয়নি: গণহত্যার পরও বিপুল সংখ্যক বাঁধাই ও নিহতের বিনিময়ে ইসরায়েল সব বন্দিকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি; হামাসের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়নি—যদিও তাদের সামর্থ্য বেশ খর্ব হয়েছে; গাজাকে সম্পূর্ণরূপে হুমকি নিরূপণহীন করা এখনো দূরপ্রসারী লক্ষ্য।
আরেকটি বাস্তবতা—আন্তর্জাতিক নিরিক্ষা ও প্রতিক্রিয়া:
ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনীতিকভাবে একপ্রকার বিচ্ছিন্নতায় পড়েছে। বয়কট আন্দোলন তীব্র হচ্ছে, কিছূ প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছে। Conversely, ফিলিস্তিনি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক জনমত ও সলিডারিটি ব্যাপকভাবে জোর পেয়েছে।
নির্দিষ্টভাবে বলা যায়—যুদ্ধবিরতি কেবল অস্ত্রবিরতি মাত্র; এটি স্থায়ী শান্তি বা রাজনৈতিক সমাধি নয়। সত্যিকারের বিজয় বা পরাজয় নির্ধারিত হবে ভবিষ্যতের কূটনৈতিক অগ্রযাত্রা, দখল-অধিকার, পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বাস্তবায়নের ওপর। তবে সামগ্রিক চিত্রে এই অস্ত্রবিরতি—গাজাবাসীর মানবিক তড়বড়ি শিথিল করা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ইস্যুর আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বেড়েছে এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডের স্বল্পমেয়াদি প্রভাব সংকুচিত হয়েছে—এই কারণগুলো মিলিয়ে অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রাজনৈতিক ও যোগাযোগগতভাবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে হামাস ও ফিলিস্তিনি পক্ষ।
শেষ করুন সূচনা-স্বরূপ কথায়—যেখানে উৎসব হচ্ছে, সেখানে মানুষ ঐতিহাসিকভাবে ‘জয়’ উপলব্ধি করে; গাজায় আজ সেই উৎসব আগের দিনের মতো একেবারেই যুদ্ধজয় নয়, বরং বাঁচার, খাবার ও পরিবারের সঙ্গে মিলনের আনন্দ। কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চে যা বদলে গেছে—ফিলিস্তিনি বিষয়টি এখন আর শুধু ভূখণ্ডগত সংকট নয়; তা বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ, সমর্থন ও রাজনীতি তৈরির একটি শক্ত স্তম্ভে পরিণত হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য