বিলাসবহুল গাড়ি কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়—এগুলো সম্পদ, ক্ষমতা, মর্যাদা ও নৈপুণ্যের প্রতীক। বিশ্বের ধনীদের কাছে এই গাড়িগুলো ব্যক্তিত্বের সম্প্রসারণ, শিল্পের এক অনন্য রূপ। আজকের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়িগুলো আধুনিক প্রকৌশল, কারুশিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে যেন চলমান শিল্পকর্ম।
কেন এত ব্যয়বহুল? রহস্য লুকিয়ে আছে এর সীমিত উৎপাদন, হ্যান্ডক্র্যাফটেড ডিজাইন, মূল্যবান উপকরণ এবং অনন্য ইঞ্জিনিয়ারিং–এ। এসব গাড়ি শুধু মর্যাদার প্রতীক নয়—ধনীদের কাছে এগুলো এক ধরনের বিনিয়োগও বটে।
(সূত্র: মিডল ইস্ট ইকোনমি)
বিশ্লেষকেরা বলেন, সীমিত সংস্করণ ও অতুলনীয় কারিগরির কারণে এই গাড়িগুলোই হয়ে উঠেছে বিশ্বের বিলাসবহুলতার শীর্ষ প্রতীক। এবার দেখে নেওয়া যাক—২০২৫ সালের পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি গাড়ি।
১. রোলস–রয়েস লা রোজ নোয়র ড্রপটেইল — ৩ কোটি ডলার (৩৬৬ কোটি টাকা)
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়ি। মাত্র চারটি তৈরি হয়েছে। প্রতিটি অংশে কারুশিল্পীর হাতে তৈরি নিখুঁত কাজ। বাঁকানো কাঠের প্যানেল ডিজাইন করতে লেগেছে দুই বছর, আর বাস্তবায়নে আরও নয় মাস। ওপেন–টপ এই রোডস্টারের আসন দুটি—বিলাসের সাথে নান্দনিক মিনিমালিজমের চমৎকার মিশেল।
২. রোলস–রয়েস বোট টেইল — ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার
রোলস–রয়েসের “সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প” বলে বিবেচিত। নকশা অনুপ্রাণিত জে–ক্লাস ইয়ট ও ১৯৩২ সালের ক্লাসিক বোট টেইল থেকে। এক বোতাম চাপলেই পিছনের ডেক প্রজাপতির মতো খুলে যায়, ভেতরে দুটি রেফ্রিজারেটর, যা ৬° সেলসিয়াসে পানীয় ঠান্ডা রাখে। তৈরি হতে সময় লেগেছে তিন বছর।
৩. বুগাতি লা ভোইচুর নোয়ার — ১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার
বুগাতির এই গাড়ি শক্তি ও সৌন্দর্যের এক নিখুঁত সংমিশ্রণ। ১৬ সিলিন্ডারের ৮ লিটার ইঞ্জিন থেকে উৎপন্ন হয় ১,৫০০ পিএস শক্তি ও ১,৬০০ নিউটন–মিটার টর্ক। “কালো গাড়ি” নামে পরিচিত এই মডেলটি বুগাতির শতবর্ষের ঐতিহ্যের প্রতীক।
৪. পাগানি জন্ডা এইচপি বারচেটা — ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার
১৯৫০–এর দশকের রেসিং “বারচেটা” গাড়ি থেকে অনুপ্রাণিত। ছাদহীন, ওপেন–টপ এই সুপারকার ওজন মাত্র ১,২৫০ কেজি—অতুলনীয় দ্রুতগতি ও মুক্তির প্রতীক।
৫. রোলস–রয়েস সুইপটেল — ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার
রোলস–রয়েস কোচবিল্ড সিরিজের সূচনা এই মডেল দিয়েই। ২০ শতকের ক্ল্যাসিক কার ও বিলাসবহুল প্রমোদতরির আদলে তৈরি। সরু ও লম্বা বডি এবং পিছনের অনন্য বাঁক গাড়িটিকে দিয়েছে ভাস্কর্য–সদৃশ রূপ।
৬. বুগাতি সেন্টোডিয়েচি — ৯০ লাখ ডলার
ব্র্যান্ডটির ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নির্মিত সীমিত সংস্করণ হাইপারকার। তৈরি হয়েছে মাত্র ১০টি। এই গাড়ির একজন মালিক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। শক্তিশালী ইঞ্জিন, তীক্ষ্ণ নকশা ও এক্সক্লুসিভিটি—তিনেই এর আবেদন।
৭. মার্সেডিজ–মায়বাখ এক্সেলেরো — ৮০ লাখ ডলার
২০০৫ সালে উন্মোচিত হলেও এখনও বিশ্বের অন্যতম দামি গাড়ি। টুইন–টার্বো ভি১২ ইঞ্জিনে এর গতি ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। প্রথমে তৈরি হয়েছিল টায়ার পরীক্ষার জন্য, পরে হয়ে ওঠে বিলাসের কিংবদন্তি। মালিকদের একজন র্যাপার জে–জে।
৮. পাগানি হুয়াইরা কডালুঙ্গা — ৭০ লাখ ডলার
মাত্র পাঁচটি তৈরি। দীর্ঘ “লেজ” আকৃতির নকশা ও অতিলঘু টাইটেনিয়াম এক্সহস্ট সিস্টেমে এটি অনন্য। সত্যিকারের সংগ্রাহকদের স্বপ্ন।
৯. পাগানি হুয়াইরা ইমোলা রোডস্টার — ৬০ লাখ ডলার
২০২৩ সালে উন্মোচিত সীমিত সংস্করণ সুপারকার। মার্সিডিজ–এএমজি–এর ৬ লিটারের ভি–১২ ইঞ্জিনে ৮৫০ হর্সপাওয়ার ও ১,১০০ নিউটন–মিটার টর্ক—এ যেন গতির মূর্ত প্রতীক।
১০. বুগাতি ডিভো — ৫৮ লাখ ডলার
মাত্র ৪০ ইউনিট উৎপাদিত। ফরাসি রেসার আলবার্ট ডিভোর স্মৃতিতে নামকরণ। ট্র্যাক–ফোকাসড ডিজাইন ও অসাধারণ গ্রিপের জন্য পরিচিত। সীমিত উৎপাদনের কারণে এর বাজারদর এখন দ্বিগুণ।
বিলাস ও প্রযুক্তির যুগলবন্দি
এই গাড়িগুলোর প্রতিটিই আধুনিক প্রকৌশল ও বিলাসবোধের একসাথে অগ্রযাত্রার গল্প বলে। এগুলো ধনীদের কেবল সম্পদ নয়—সময়, শিল্প ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রতীক। আর অটোমোবাইল ইতিহাসে এগুলো হয়ে থাকবে “গতি ও সৌন্দর্যের সোনালি স্বাক্ষর”।
পাঠকের মন্তব্য