শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ভোরে দেশের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড–এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাক করেছে একটি অজ্ঞাত হ্যাকার গ্রুপ। ভোর ৫টা ৪২ মিনিটে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় ব্যাংকের কোটি কোটি গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।
হ্যাকাররা নিজেদের পরিচয় দিয়েছে “MS 470X” নামে। তারা ব্যাংকের ফেসবুক পেজের প্রোফাইল ছবি ও কভার ফটো পরিবর্তন করে নিজেদের দলের লোগো ও নাম সম্বলিত ছবি বসিয়ে দেয়। এরপর একটি হুমকিমূলক পোস্টে জানায়, ইসলামী ব্যাংকের অনলাইন কার্যক্রম তাদের নজরদারিতে রয়েছে এবং শিগগিরই ব্যাংকের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে বড় ধরনের সাইবার আক্রমণ চালানো হবে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই মন্তব্য করছেন—দেশের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট ব্যাংকের পেজ হ্যাক হওয়া নিছক কোনো মজার বিষয় নয়; বরং এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা সংকেত। কারণ ব্যাংকিং সেক্টরে সাইবার আক্রমণ ঘটলে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, কোটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য, লেনদেনের নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে যে, অনলাইন ব্যাংকিং সেবা ও লেনদেন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে। তবে তারা ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজ হ্যাকিংয়ের ঘটনা হলেও এর পেছনে বড় কোনো সাইবার অপরাধী চক্র থাকতে পারে। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আর্থিক খাতে বড় ধরনের সাইবার হামলা ঘটতে পারে।
একজন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন,
“সাইবার অপরাধীরা প্রথমে প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম দখল করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর মূল আক্রমণ হয় অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমে। তাই ব্যাংকিং খাতের জন্য এটি একটি লাল সংকেত।”
এদিকে সাধারণ গ্রাহকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের শঙ্কা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ বলছেন, অনলাইন ব্যাংকিং সেবার প্রতি আস্থা কমে গেলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেকে আবার ব্যাংকের কাছ থেকে দ্রুত ও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সাইবার নিরাপত্তা ইস্যু আবারও সামনে চলে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিকবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনা এখনো বিশ্বব্যাপী আলোচিত। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসলামী ব্যাংকের এই ঘটনা কেবল সতর্কবার্তা নয়; বরং একটি বড় বিপদের পূর্বাভাস হতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য