চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক গতি আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এ বছর বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ শতাংশে। গত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ শতাংশ।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও)-এর সেপ্টেম্বর সংস্করণে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এ বিশ্লেষণ দেওয়া হয়।
প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি হবে ভোগব্যয়। কারণ—
-
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
-
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে খরচও অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।
তবে প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করেছে, সংকোচনমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি বিনিয়োগের গতিকে মন্থর করতে পারে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অন্যান্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে কিছুটা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।
প্রবৃদ্ধিতে চারটি প্রধান প্রভাব
এডিবি চারটি বড় কারণে প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করেছে—
-
রাজনৈতিক পরিবর্তন
-
ঘন ঘন বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ
-
শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা
-
উচ্চ মূল্যস্ফীতি
তৈরি পোশাক খাত কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা এবং নতুন শুল্ক আরোপ অর্থনীতিকে চাপে ফেলবে।
রপ্তানি খাতের চ্যালেঞ্জ
এডিবি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় দেশের প্রধান রপ্তানি খাতের ওপর চাপ তৈরি হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের অনেক সময় মূল্য কমাতে হতে পারে।
কান্ট্রি ডিরেক্টরের মন্তব্য
এডিবির বাংলাদেশে কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন,
“ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর।”
তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা ও মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনও অনিশ্চিত। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করা গেলে প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না।
মূল্যস্ফীতির চিত্র
প্রতিবেদনে বলা হয়—
-
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
-
গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে।
এডিবির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর পেছনে কাজ করেছে—
-
পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা,
-
বাজার তথ্যের ঘাটতি,
-
সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা,
-
এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
ঝুঁকি ও করণীয়
২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে এখনও কিছু ঝুঁকি রয়েছে—
-
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা,
-
ব্যাংক খাতের দুর্বলতা,
-
এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ।
এডিবি মনে করে, টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
উপসংহার
এডিবির পূর্বাভাসে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আশার আলো থাকলেও চ্যালেঞ্জও কম নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, টেকসই মুদ্রানীতি ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে আগামী দিনে অর্থনীতি আরও গতি পাবে। অন্যথায় প্রবৃদ্ধির এই ইতিবাচক পূর্বাভাস বাস্তবে রূপ নেওয়া কঠিন হবে।
পাঠকের মন্তব্য