ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পর ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওকে ভুয়া বলে শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর ফ্যাক্ট চেক টিম বাংলাফ্যাক্ট। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছিল যে, ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনে ভোট প্রত্যাখ্যানের পর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। তবে বাংলাফ্যাক্টের যাচাইয়ে এটি পুরোনো ভিডিও হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার দৃশ্য।
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ভিডিওটি প্রচারের সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যাচারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। ভিডিওটির বিভিন্ন স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর দেখা যায়, একই দৃশ্য ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলা আউটলুক এবং ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, ১৫ জুলাই ঢাবিতে ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা:
ভিডিওটি আসলে একেবারেই ভিন্ন ঘটনার, যেখানে ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনকারীরা আহত হয়েছেন। একই দৃশ্য ও পরিস্থিতি ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে ১৫ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়, যেখানে গুজব ছড়ানো ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গতি মিলছে।
তবে, বাংলাফ্যাক্ট নিশ্চিত করেছে যে, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ভিডিওটি কোনো সংঘর্ষ বা ভোট প্রত্যাখ্যানের বিষয়েও কোনো সত্যতা প্রকাশ করেনি। বরং, এটি পুরোনো ভিডিও যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাফ্যাক্টের ভূমিকা:
বাংলাফ্যাক্ট, যা প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর একটি ফ্যাক্ট চেক এবং মিডিয়া রিসার্চ টিম, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য চিহ্নিত করে, তা জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে বাংলাফ্যাক্ট পরবর্তী সময়ে ভুয়া খবর বা গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্যের প্রচার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে অসত্য তথ্য খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং এর ফলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তাই বাংলাফ্যাক্ট ও অন্যান্য ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সঠিক তথ্যের প্রচার:
বাংলাফ্যাক্টের দাবি, এ ধরনের মিথ্যাচার ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সকল মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের উচিত সঠিক ও যাচাইকৃত তথ্য প্রচার করা, এবং ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে সজাগ থাকা। এটি শুধু তথ্যের সঠিকতা রক্ষা নয়, বরং দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে এবং মিথ্যাচার থেকে মুক্ত রাখতে বাংলাফ্যাক্ট কাজ করে যাচ্ছে। এটি শুধু একটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রক্রিয়া নয়, বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কেন জরুরি ফ্যাক্ট চেক:
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে যখন এ ধরনের মিথ্যা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সাধারণ জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি এই মিথ্যা ভিডিওগুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা এবং উত্তেজনা তৈরি করতে পারে, যা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর। সঠিক তথ্যের প্রচারই এর উত্তম সমাধান।
ফ্যাক্ট চেক করার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় যে, ভিডিওটির ভিত্তি ছিল না এবং জনগণ ভুল তথ্য থেকে সুরক্ষিত থাকে। এজন্য গুজব ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দায়িত্ব সকলের।
শিবির ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের গুজব:
ডাকসু নির্বাচনে ছড়ানো সংঘর্ষের ভিডিওটি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রচারিত হচ্ছে। কোনো সত্যতা পাওয়া না গেলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে এরকম গুজব ছড়িয়ে পড়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে, বাংলাফ্যাক্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক তথ্য নিশ্চিত করার কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়াও, বাংলা মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো যখন কোনো বিষয়ে খবর প্রকাশ করে, তখন সেগুলি সঠিক এবং যাচাইকৃত হওয়া প্রয়োজন। গুজবের বিরুদ্ধে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশের মিডিয়া ও সঠিক তথ্য:
বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থা এবং ফ্যাক্ট চেকিং টিমগুলো গুজব এবং ভুল খবরের ব্যাপারে আরও সচেতন হয়ে উঠছে, যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি না ছড়ায়। বাংলাফ্যাক্ট, পিআইবি এবং অন্যান্য সংবাদ প্রতিষ্ঠান তাদের স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বশীলতার জন্য প্রশংসিত হচ্ছে। তবে, আরও জোরদার প্রচারণা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যাতে জনগণ সঠিক তথ্য পায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কীভাবে এই ধরনের মিথ্যা খবরের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি? এর জন্য প্রয়োজন তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা এবং সকল মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সঠিক এবং ভিত্তিক তথ্য প্রদান করা।
পাঠকের মন্তব্য