জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাসকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার মামলায় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এফ এম শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে আদালত। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম. মিজবাহ উর রহমানের আদালত শুনানির পর এ আদেশ দেন।
মামলার বিবরণ:
এই মামলায়, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অতর্কিত গুলিতে আহত হন অনিক কুমার দাস। ঘটনায় তাকে প্রথমে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে, তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনার পর, অনিক কুমার দাস বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ২৫৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক কেএম আবদুল গত ৭ সেপ্টেম্বর এফ এম শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করার জন্য আবেদন করেন, যা ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে শুনানির মাধ্যমে গ্রেপ্তার আদেশে পরিণত হয়।
আদালত কার্যক্রম:
এদিন, এফ এম শরিফুল ইসলামকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার উপস্থিতিতে শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে, ১৮ আগস্ট বিকেলে তাকে ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ১৯ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায়ও তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সে সময় জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গুলি চালানো এবং হামলা:
ঘটনার সময়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পার হয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা অতর্কিত গুলি চালায়। এতে অনিক কুমার দাস গুরুতর আহত হন।
এই হামলার পেছনে কোন ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে এটি একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্ম দিয়েছে। অনিকের পরিবার এবং সমর্থকদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে এফ এম শরিফুল ইসলাম এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
তদন্ত এবং রাজনৈতিক প্রভাব:
এফ এম শরিফুল ইসলাম ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হওয়ায় এই ঘটনাটি রাজনীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে।
তবে, পুলিশ ও আদালত অঙ্গনে তদন্ত এখনও চলছে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা:
মামলার তদন্ত চলাকালীন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরিকল্পনা করছে। সামাজিক মাধ্যমেও এর ব্যাপারে আলোচনা চলেছে এবং ছাত্রদল, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকেও অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া এসেছে।
এই হত্যাচেষ্টার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য