নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেনারেশন জেড (জেন-জি) তরুণদের বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানী কাঠমান্ডুতে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন ঘেরাও করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এতে আটজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার এবং সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করছে।
এদিন কাঠমান্ডুর সিভিল হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক মোহন চন্দ্র রেগমি জানান, নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। আহতদের সিভিল হাসপাতাল, এভারেস্ট হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিক্ষোভের শুরু এবং সরকারের পদক্ষেপ
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন জানায়, সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এছাড়া, দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ করছেন।
বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিয়েছেন। তরুণদের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। শিক্ষার্থী ইউজন রাজভাণ্ডারি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ।” অন্যদিকে, ২০ বছর বয়সী ইক্ষামা তুমরোক জানিয়েছেন, “আমরা সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি।”
গত কয়েকদিনের নিষেধাজ্ঞার কারণ
গত শুক্রবার নেপাল সরকার ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে নেপালের বিপুলসংখ্যক জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এতে বিনোদন, সংবাদ এবং ব্যবসা পরিচালনা সহ নানা কাজে ব্যবহৃত সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিরোধিতা সৃষ্টি হয়েছে।
তরুণদের প্রতিবাদ ও টিকটকের ভিডিও
নিষেধাজ্ঞার পর টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে নানা ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে। এসব ভিডিওতে সাধারণ নেপালিদের সংগ্রামের সঙ্গে সরকারের রাজনীতিবিদদের বিলাসী জীবন ও বিদেশ ভ্রমণের তুলনা করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারী ভূমিকা ভারতী বলেন, “বিদেশে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, আর তারা (সরকার) ভয় পাচ্ছে যে, এখানেও তেমন কিছু হতে পারে।”
সরকারের নতুন পদক্ষেপ
নেপালের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সাত দিনের মধ্যে নেপালে নিবন্ধন করতে হবে এবং স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস রয়েছে।
অতীতে, গত জুলাই মাসে টেলিগ্রাম অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এছাড়া গত বছরের আগস্টে ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা পরে টিকটক নেপালে পুনরায় চালু হয়েছিল।
পাঠকের মন্তব্য