হায়, সেলুকাস!—রাজনীতির খেলায় বন্ধুর সঙ্গে শত্রু আর শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার পরিহাস নতুন কিছু নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক চীন সফর সেই বাস্তবতারই আরেকটি প্রতিচ্ছবি। যে দেশকে একসময় পরম বন্ধু ভেবে কাছে টেনেছিল ভারত, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন দিল্লিকে কঠিন শাস্তি দিয়েছে। আর সেই শাস্তির দায় ঘোচাতে বাধ্য হয়ে মোদিকে হাত বাড়াতে হচ্ছে এক সময়ের চরম শত্রু চীনের দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের আগুনে ভারত
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে ভারতের রপ্তানি খাত বড় ধাক্কা খেয়েছে। বন্ধুর কাছ থেকে এমন দগ্ধ হওয়ায় মোদি সরকারের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এবার সেই পোড়া মুখে প্রলেপ দিতে ‘শত্রু’ চীনের দিকেই তাকাতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে।
পরিহাসের পুনরাবৃত্তি: ‘হিন্দি-চীনী ভাই ভাই’?
সাত দশক আগে ভারত-চীন মৈত্রীর প্রতীক ছিল স্লোগান—“হিন্দি-চীনী ভাই ভাই”। কিন্তু সীমান্ত যুদ্ধ সেই সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিল। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চীনবিরোধী জোটে যোগ দিয়েছিল ভারত। অথচ ভাগ্যের পরিহাসে এখন সেই চীনের কাছেই হাত বাড়াচ্ছে দিল্লি।
বিশ্ব রাজনীতির জটিল সমীকরণ
অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে তোলে চীনবিরোধী চতুর্দেশীয় জোট (Quad)। অথচ আজ যুক্তরাষ্ট্রেরই শুল্কনীতির কারণে জাপান পেয়েছে ১৫ শতাংশ শুল্ক সুবিধা, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ। বিনিময়ে জাপানকে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতকে বহন করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা। ফলে নয়াদিল্লির জন্য চীনকেই হয়ে উঠতে হচ্ছে সম্ভাব্য ভরসার জায়গা।
সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলন
শনিবার (৩০ আগস্ট) ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যেই চীনের তিয়ানজিন শহরে পৌঁছেছেন। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) দুই দিনের সম্মেলন। ১০ সদস্য রাষ্ট্রের এ সম্মেলনে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার কূটনৈতিক চেষ্টা চালাবেন মোদি।
এক্স-এ দেওয়া বার্তায় মোদি লিখেছেন—
“চীনের তিয়ানজিন শহরে পৌঁছেছি। এসসিও সম্মেলনের ফল ও কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি।”
৭ বছরের বিরতি শেষে নতুন দিগন্ত?
প্রায় সাত বছর পর চীন সফরে গেছেন মোদি। এর আগে জাপান সফরে তিনি ১৩টি চুক্তি করেছিলেন। তখন এক্স-এ লিখেছিলেন, “জাপান সফর দুই জাতির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
এখন দেখার বিষয়—চীন সফর থেকে কী ধরনের ফল আসে। সাত বছরের জমে থাকা বরফ কি গলবে? নাকি ভূরাজনীতির চাপে আরও জটিল হয়ে উঠবে ভারত-চীন সম্পর্ক?
পাঠকের মন্তব্য