বিশ্ব শান্তির সূচকে আইসল্যান্ড টানা ১৫ বছর ধরে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। অপরাধের হার কম, শক্তিশালী কল্যাণব্যবস্থা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সংহতির কারণে দেশটিকে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ এই সূচকে রয়েছে ১২৩তম স্থানে, যা নিরাপত্তা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সামাজিক উত্তেজনার মতো চ্যালেঞ্জকে প্রতিফলিত করছে।
আইসল্যান্ড কেন শীর্ষে?
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (GPI) ২০২৪ অনুযায়ী, আইসল্যান্ডের স্কোর ১.১১২—যা বিশ্বের সবচেয়ে কম। অর্থাৎ দেশটির পরিবেশ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ।
-
অপরাধের হার প্রায় নেই বললেই চলে।
-
সমতা ভিত্তিক শিক্ষা ও কল্যাণব্যবস্থা সবার জন্য সুযোগ তৈরি করেছে।
-
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দৃঢ়, অর্থনৈতিক বৈষম্য খুবই কম।
-
ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব থেকেও অনেকটা দূরে।
ফলে টানা ১৫ বছর ধরে আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে।
বাংলাদেশের অবস্থান
অন্যদিকে বাংলাদেশ শান্তির সূচকে রয়েছে ১২৩তম স্থানে। এ অবস্থান দেশের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন।
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স দেশগুলোর অবস্থা মূল্যায়ন করে তিনটি সূচকে—
-
মিলিটারাইজেশন বা সামরিকীকরণ
-
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংঘাত
-
নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা
এসব সূচকে বাংলাদেশের স্কোর তুলনামূলকভাবে বেশি, অর্থাৎ এখানে ঝুঁকি ও অস্থিরতা বেশি।
বৈশ্বিক চিত্র
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স মোট ১৬৩টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের মাত্র ৬৬টি দেশে শান্তির উন্নতি হয়েছে, বাকিগুলোতে পরিস্থিতি হয় অপরিবর্তিত নয়তো খারাপ হয়েছে।
যেখানে আইসল্যান্ড, নরওয়ে বা নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কল্যাণমূলক নীতির কারণে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে আছে, সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক সমস্যার কারণে পিছিয়ে আছে।
শান্তির মূল পাঠ
আইসল্যান্ড ও বাংলাদেশের অবস্থান আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
-
শান্তি শুধু সংঘাতহীন পরিবেশ নয়, বরং ন্যায়সঙ্গত শিক্ষা, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফল।
-
কল্যাণব্যবস্থা যত শক্তিশালী, অপরাধ ও সহিংসতা তত কম।
-
আর বিপরীতে, অস্থিতিশীলতা যত বাড়ে, শান্তি তত দূরে সরে যায়।
বাংলাদেশের জন্য মূল শিক্ষা হলো—সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করা, রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানো এবং আইনশৃঙ্খলা উন্নত করা ছাড়া শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে রূপান্তর সম্ভব নয়।
পাঠকের মন্তব্য