ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। এই নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইংরেজি বিভাগের ২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান। তার ইশতেহার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নধর্মী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আশিকুর রহমান তার ইশতেহারে শুরুতেই লিখেছেন— “ডাকসুতে দাঁড়াইছে সবাই, কিন্তু বসে আছে একজনই। ডাকসুতে আগুন লাগাতে চলে আসলাম বন্ধুরা।”
এই বক্তব্যেই তার ব্যতিক্রমী অবস্থান স্পষ্ট হয়। তিনি প্রচলিত স্লোগান ও উন্নয়নের তালিকার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যা, হতাশা ও প্রত্যাশাকে সামনে এনেছেন।
ক্লাসে উপস্থিতির নম্বর শিথিল করার প্রতিশ্রুতি
আশিকুরের ইশতেহারের অন্যতম আলোচিত দিক হলো ক্লাসে উপস্থিতি নীতিমালা পরিবর্তনের দাবি। তিনি বলেছেন, “আই ডিক্লেয়ার ওয়ার ওন মাই ফ্যাকাল্টিজ। ওই ৫ মার্কের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বস্তাপচা লেকচার শোনা কেন? ক্লাস না করেও ভালো রেজাল্ট সম্ভব। কিউএস র্যাঙ্কিং দিয়ে আদৌ কিছু হয়? অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সুবিধা আগে।”
তার মতে, ৭০–৭৫% উপস্থিতিতেই পূর্ণ নম্বর পাওয়া উচিত এবং ৫০% উপস্থিতি থাকলেই পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া দরকার।
শিক্ষার্থীদের সমস্যায় সরাসরি ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি
তিনি ইশতেহারে লিখেছেন, তার মূল দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীদের সমস্যা তুলে ধরা এবং প্রশাসনের সঙ্গে চাপ প্রয়োগ করে তা সমাধান করা। তার ভাষায়, “আপনারা সমস্যা বলবেন, আমি ফাডাফাডি করব, প্রেসারাইজ করব, দাবি আদায় করব। সোফায় বসে তামাশা দেখা আপনার কাজ নয়।”
নিরাপত্তা ও অবকাঠামোতে পরিবর্তনের অঙ্গীকার
আশিকুর ঢাবির রিসোর্স ও অবকাঠামোকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে মেয়েদের যাতায়াত ও আবাসন সমস্যার সমাধানে নতুন হল নির্মাণ বা বিদ্যমান ভবন রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাস যেন বহিরাগতদের পার্কিং স্পট বা শব্দদূষণের জায়গা না হয়, সেদিকেও কঠোর নজর দেওয়া হবে।
সংস্কৃতি, ধর্মীয় সহাবস্থান ও গবেষণায় ফোকাস
আশিকুর তার ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন যে, ঢাবিতে কুরআন তিলাওয়াত, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা ও কনসার্ট—সবকিছুই হবে, তবে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করে। পাশাপাশি তিনি বলেন, যথাযথ ফান্ডিং পেলে ঢাবির শিক্ষার্থীরাই প্রযুক্তি ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে সক্ষম হবে।
সততা ও ভিন্নধর্মী নেতৃত্বের দাবি
তিনি ভোট চাওয়ার যুক্তি হিসেবে নিজের আর্থিক সততা, নারী কেলেঙ্কারি থেকে দূরে থাকা, স্বজনপ্রীতি না করা এবং কৌশলগত দক্ষতাকে সামনে এনেছেন। তার মতে, তিনি প্রচলিত নেতার চেয়ে বরং একজন রাজনৈতিক আমলার ভূমিকায় কাজ করবেন।
তিনি মজা করে নিজেকে বলেছেন “ওয়ারটাইম কনসিলিয়ার ফ্রম দ্য গডফাদার।”
সতর্ক বার্তা ও এক্সপোজ নীতি
আশিকুর স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, অন্যায় বা কমিশনবাজির কোনো ঘটনা ঘটলে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্যে এক্সপোজ করবেন। তাই যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে ঐক্য করতে চান, তারা যেন তাকে ভোট না দেন।
জেন-জি প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ
আশিকুর নিজের প্রচারণাকে জেন-জি স্টাইলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন। পোস্টার, বক্তব্য ও প্রচারণা সবকিছুতেই থাকছে তরুণদের ভাষা ও সংস্কৃতির ছাপ। এমনকি তিনি উল্লেখ করেছেন, “আপনি যদি অ্যানিমে বা মুভি লভার হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই এই ওটাকুকে ভোট দিবেন।”
সরল স্বীকারোক্তি
অন্যদিকে তিনি মজার ছলে স্বীকার করেছেন, রাত জেগে সমস্যায় পাশে পাওয়া যাবে না, কারণ তিনি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন এবং তার কোনো বাইকও নেই। তবে তিনি এটিও স্পষ্ট করেছেন যে, শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পাশে থাকার জন্য প্রক্টোরিয়াল টিম যথেষ্ট সক্রিয়।
শেষ বিশ্বাস
সবশেষে আশিকুর বলেছেন, সবকিছুই আল্লাহর হাতে। তিনি লিখেছেন, “আর নিশ্চয়ই আমার জন্য আমার রবই যথেষ্ট।”
পাঠকের মন্তব্য