সুদীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর এই ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন, দাবিদাওয়া এবং প্রত্যাশার ফলেই এই নির্বাচন বাস্তবায়নের পথে। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতে যাচ্ছে।
জাকসু নির্বাচন শুধু একটি ভোটের আয়োজন নয়—এটি শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর, অধিকার, গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণের প্রতীক। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার্থীরা যে বঞ্চনা, অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে ছিল, এবার তার অবসান হতে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবার মোট ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৯১৯ জন। সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে থাকলেও সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সহ গুরুত্বপূর্ণ পদ শিক্ষার্থীদের হাতেই থাকবে।
গঠনতন্ত্রে এবার কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সংযোজন করা হয়েছে নতুন পদ যেমন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী), সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (নারী) এবং কার্যকরী সদস্য হিসেবে তিনজন নারী প্রতিনিধি। এই উদ্যোগকে শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানালেও তারা আরও বিস্তৃত অংশগ্রহণ আশা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এখন সরগরম। ছাত্র সংগঠনগুলো শেষ মুহূর্তে তাদের প্যানেল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ জাতীয় রাজনীতির ধারাবাহিকতায় প্রার্থী দিচ্ছে, কেউ আবার বিকল্প ও প্রগতিশীল ধারা তুলে ধরছে। অনেকেই বলছেন, এই নির্বাচন নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরির এক বড় সুযোগ।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, জাকসু শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কাঠামো নয়, বরং এটি তাদের সমস্যার সমাধান, দাবি আদায় এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় প্ল্যাটফর্ম। টিউশন ফি থেকে শুরু করে আবাসন, পরিবহন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও ক্যাম্পাস সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রেই জাকসুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
৩৫ বছর পর ইসলামী ছাত্রশিবিরের অংশগ্রহণ, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের স্বতন্ত্র প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়নের বিভক্ত ধারা কিংবা প্রগতিশীল জোট—সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে বহুমাত্রিক ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ।
মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া এখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নির্বাচনের দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
এই নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতির নয়, বরং শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, আন্দোলন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার বাস্তবায়ন। তাই শিক্ষার্থীরা একে গণতন্ত্রের নতুন সূচনা হিসেবে দেখছেন।
পাঠকের মন্তব্য