জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ, সমন্বিত ও সংশোধিত খসড়া পাঠিয়েছে। খসড়াটি সম্পর্কে মতামত আগামী ২০ আগস্ট বিকেল ৪টার মধ্যে কমিশনের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। শনিবার রাতে কমিশনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
খসড়ায় রয়েছে— একটি পটভূমি, সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রম, ঐকমত্যে পৌঁছানো বিষয়সমূহ এবং “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” বাস্তবায়নের আট দফা অঙ্গীকারনামা।
খসড়ার পটভূমি
খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের নীতিকে ধারণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হলেও গত ৫৩ বছরে জনগণের সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি। বারবার গণতান্ত্রিক ধারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ত্যাগ করে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের অধিকার হরণ, গুম-খুন, মামলা, হামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে তারা নৈরাজ্য ও ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে।
প্রধান প্রস্তাবনা
খসড়ায় সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের জন্য একাধিক প্রস্তাব উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
-
সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন বাধ্যতামূলক করা।
-
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে গণভোটের বিধান।
-
জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করা।
-
জরুরি অবস্থায় জীবন ও মৌলিক অধিকার খর্ব না করা।
-
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয়/দলীয় পদে থাকতে পারবেন না।
-
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন এবং একই সঙ্গে দলীয় প্রধান হতে পারবেন না।
এছাড়া সংসদ ভেঙে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন (বিশেষ পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩০ দিন বাড়ানো যাবে) নির্ধারণের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
আট দফা অঙ্গীকারনামা
খসড়ার শেষাংশে “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” বাস্তবায়নের আট দফা অঙ্গীকার প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
-
জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন।
-
সনদের বিধানকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিদ্যমান আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া।
-
সনদের বিধানের ব্যাখ্যা দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা।
-
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া।
-
শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
-
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আগে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো অবিলম্বে কার্যকর করা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, জুলাই সনদকে আইনি বাধ্যবাধকতা দিতে এবং বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণে দেশি-বিদেশি সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য