করোনাকাল আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন সবচেয়ে দৃশ্যমান। একসময় অফিস মানেই ছিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট ডেস্কে বসে কাজ করা। কিন্তু আজকের কর্পোরেট জগতে “হাইব্রিড ওয়ার্ক মডেল” হয়ে উঠেছে নতুন বাস্তবতা।
হাইব্রিড মডেলে কর্মীরা সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিন অফিসে যান এবং বাকি দিনগুলো বাসা থেকে বা অন্য কোথাও বসে কাজ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে—এটি কি কেবল মহামারীর সময়কার একটি সাময়িক সমাধান, নাকি ভবিষ্যতের কর্মপদ্ধতির স্থায়ী রূপ?
হাইব্রিড মডেল কীভাবে কাজ করে?
হাইব্রিড ওয়ার্ক মডেল এমন এক কর্মপদ্ধতি যেখানে সময় নির্ধারিত থাকলেও কাজের স্থান নমনীয় (flexible)। উদাহরণস্বরূপ—
-
সপ্তাহে ২ দিন অফিসে উপস্থিতি (যেমন: সোম ও বুধ)
-
বাকি দিনগুলো রিমোট কাজ (যেমন: মঙ্গল ও বৃহস্পতি)
এই ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠান অফিস পরিচালনার খরচ বাঁচাতে পারে এবং কর্মীরা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন।
কেন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো হাইব্রিড মডেল গ্রহণ করছে?
১. খরচ কমে যায়
-
অফিস স্পেসের চাহিদা কমে
-
বিদ্যুৎ, ক্যান্টিন, ইন্টারনেট খরচ হ্রাস পায়
-
ইনফ্রাস্ট্রাকচার খাতে সাশ্রয় হয়
২. কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়
-
পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ
-
ট্র্যাফিক ও দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি থেকে মুক্তি
-
মানসিক প্রশান্তি, যা কাজের গুণমান বাড়ায়
৩. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়
Gallup-এর এক জরিপে দেখা গেছে, হাইব্রিড কর্মীরা সম্পূর্ণ অফিস-ভিত্তিক বা সম্পূর্ণ রিমোট কর্মীদের তুলনায় বেশি মনোযোগী ও উৎপাদনশীল।
এর মূল কারণ—ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে পেশাগত জীবনের সুষম সমন্বয়।
৪. বৈশ্বিক প্রতিভা নিয়োগ সহজ হয়
-
লোকেশন আর সীমাবদ্ধতা নয়
-
বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ সম্ভব
-
বহুমুখী সংস্কৃতি ও দক্ষতার সমন্বয়ে উদ্ভাবনী চিন্তা বৃদ্ধি পায়
-
আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা সহজ হয় এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ে
উপসংহার
হাইব্রিড ওয়ার্ক মডেল আর কেবল সাময়িক সমাধান নয়, বরং কর্পোরেট জগতে এটি ধীরে ধীরে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এর ফলে যেমন খরচ সাশ্রয় হয়, তেমনি কর্মীরা কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হাইব্রিড কর্মপদ্ধতি একটি কার্যকরী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য