যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ওই সময়ের আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে তোলা পণ্যগুলো নতুন শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে রফতানিকারকরা আগাম প্রস্তুতি নেন এবং দ্রুত পণ্য পাঠানোয় চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানির চাপ বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, রফতানিকারকদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলে প্রতিদিন অতিরিক্ত প্রায় ৮০০ কনটেইনার রফতানি হচ্ছে। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ১৯টি কনটেইনার ডিপোতে জমা হয়েছিল ১৫ হাজার ৪০০টি ২০ ফুট এককের রফতানি কনটেইনার, যার অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রগামী।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ৭ আগস্টের সময়সীমার মধ্যে পণ্য পাঠানোর জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছেন। তবে যারা আগে থেকেই উৎপাদন শেষ করেছিলেন, তারা ১ আগস্টের আগেই রফতানি সম্পন্ন করেছেন। এতে করে জুলাই মাসে রফতানিতে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, শুধু জুলাই মাসেই বাংলাদেশ থেকে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে ৮২ কোটি ডলারের পণ্য গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই রফতানির ৬০ শতাংশ হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করেন। এরপর ৩১ জুলাই, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে তৃতীয় দফার আলোচনায় একটি চুক্তির ভিত্তিতে শুল্ক আরও কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ব থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক কার্যকর ছিল, ফলে মোট শুল্ক এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশের বেশি। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে আগে শুল্ক ছিল ১৬.৫ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শুল্ক কার্যকরের সময় গণনা শুরু হয় বন্দর থেকে পণ্য ছাড়ার সময় থেকে। এপ্রিল মাসেও একইভাবে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারে শুল্ক ছাড় থাকায় বাংলাদেশ এখনো তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ, দেশের পোশাক শিল্প মূলত তুলানির্ভর এবং বাংলাদেশের আমদানিকৃত তুলার একটি বড় অংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এদিকে, কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, পাল্টা শুল্ক এড়াতে রফতানিকারকরা আগেই কনটেইনার পাঠিয়েছেন ডিপোগুলোতে। যার প্রভাব আগস্ট মাসেও টিকবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতি মাসে যেখানে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কনটেইনার রফতানি হয়, সেখানে জুলাই মাসে রফতানি বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজারে, যার মধ্যে ৮১ হাজার কনটেইনার ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য