এক বছর আগেও যেখানে দেশের মুদ্রাস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের উপরে, সেখানে বর্তমানে তা কমে এসেছে এক অঙ্কে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঠিক নীতি ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার কারণেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এটি সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত বলেও মনে করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১১.৬৬ শতাংশ, যা ছিল এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি তখন দাঁড়ায় ১৪.১০ শতাংশে, যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও ছিল ৯.৬৮ শতাংশ।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় পরিস্থিতি বদলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসে সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮ শতাংশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এই হার দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে। মে মাসে এসব হার যথাক্রমে ছিল ৮.৫৯ এবং ৯.৪২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতির হার এবং ২০২৩ সালের মার্চের পর এই প্রথমবার তা ৯ শতাংশের নিচে নেমেছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সুশৃঙ্খল বাজেট পরিচালনার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টা চালানো হয়েছে যাতে দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণের বোঝা না বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, বাজেট ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কিছুটা কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে কর্মসংস্থান এখনো অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ বলে মত দেন তিনি।
পরিকল্পনা কমিশনের জিইডি সদস্য ড. মনজুর হোসেন জানান, চিকন চাল ও সবজির দাম কমলেও মোটা চালের দাম এখনো বেশ চড়া। খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্ধেক দায়ই চালের ওপর, যা জুনে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ নেই, তাই এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত কয়েক মাসে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং মুদ্রানীতির সঠিক প্রয়োগে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে বোরো ধান ও মৌসুমি ফলের ভালো উৎপাদন এবং স্থিতিশীল বিনিময় হার মুদ্রাস্ফীতি কমার অন্যতম কারণ
এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বাজার তদারকি ও নজরদারি বাড়ানোয় সাধারণ মানুষ এবার কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, চালের দাম যদি না কমে, তাহলে মুদ্রাস্ফীতির নিম্নগতি থেমে যেতে পারে এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সরকার যদি বর্তমান কৌশল ধরে রাখতে পারে, তবে আগামী মাসগুলোতে আরও মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
পাঠকের মন্তব্য