ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান উপদেষ্টা, বলেছেন:
“জুলাই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। তাদের স্বপ্নই হবে আগামী বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর।”
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট), ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দেশজুড়ে অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূসের বক্তব্যের মূল বার্তা:
৫ আগস্ট শুধু দিন নয়—এটি প্রতিজ্ঞা ও গণজাগরণের প্রতীক
“এটি জাতির পুনর্জন্মের দিন। একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জাতির সম্মিলিত প্রতিবাদের ঐতিহাসিক ক্ষণ।”
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও গণতন্ত্র ও সুবিচার থেকে বঞ্চিত মানুষ
“১৬ বছরের শাসনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এবং দমন-পীড়ন ছিল সাধারণ মানুষের জীবনের অংশ। তরুণরা চাকরির জন্য ঘুষ দিতে না পারলে পিছিয়ে গেছে।”
বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতির সমালোচনা
“এই পদ্ধতি দুর্নীতি ও মাফিয়াতন্ত্রকে বৈধতা দিয়েছিল। ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল প্রতিটি স্তরে।”
শহিদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতা:
৮৩৬টি শহিদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে ইতিমধ্যে ৯৮.৪০ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
১৩,৮০০ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ তিন শ্রেণিতে ১৫৩.০৪ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
৭৮ জন গুরুতর আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বিদেশে (সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, রাশিয়া)। চিকিৎসা ব্যয়: ৯৭.৫ কোটি টাকা।
দেশের সকল সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আহতদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন:
“জুলাই শহিদদের আত্মত্যাগের পূর্ণ মর্যাদা তখনই দেওয়া হবে, যখন আমরা সত্যিকারের জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিমূলক এবং মানবিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলব।”
“আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের শপথ—কোনো নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।”
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
ড. ইউনূস বলেন,
“২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া।
হাজারো আন্দোলনকারীকে হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের মধ্য দিয়ে এই সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে।”
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে জাতিকে আহ্বান জানান—
“এই শহিদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে আমাদের কাজের মাধ্যমে। দেশ গড়তে হবে এমনভাবে, যেখানে বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির জায়গা থাকবে না।”

পাঠকের মন্তব্য