২০০৯ সালে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ছিল একটি স্বপ্ন; যা আজ বাস্তবতার পথে অনেক দূর এগিয়েছে। এখন সময় এসেছে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার – যার নাম “ Smart Bangladesh পরিকল্পনা ২০৪১” এটি একটি জ্ঞানভিত্তিক, টেকসই, উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল সমাজ গঠনের রূপরেখা। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য গুলো হলো : দক্ষ জনবল তৈরি, প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন, উদ্ভাবনভিত্তিক অর্থনীতি ও সবুজ উন্নয়ন নিশ্চিত করা। কর্পোরেট সেক্টরের অংশগ্রহণ ছাড়া এই রূপান্তর অসম্ভব — তাই এই প্রবন্ধে কর্পোরেট ভূমিকা ও তাদের সম্ভাবনার বিশ্লেষণ করা হবে।
Smart Bangladesh পরিকল্পনায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখিত রয়েছে
১) স্মার্ট সিটিজেন : স্মার্ট নাগরিক মানে শুধুমাত্র প্রযুক্তি ব্যবহারকারী নয়—বরং তথ্য সচেতন, ডিজিটাল দক্ষ, পরিবেশ সচেতন ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল একজন মানুষ। তরুণ প্রজন্ম আজ মোবাইল অ্যাপ, ই-লার্নিং, হেলথ প্ল্যাটফর্ম, ই-কমার্স ব্যবহার করে নিজেকে দক্ষ করে তুলছে।
২) স্মার্ট অর্থনীতি : অর্থনীতিকে আর ও প্রযুক্তিমূলক, উদ্ভাবনী এবং টেকসই করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হবে। বাজারে স্টার্টআপ বুম, ফিনটেক এক্সপ্লোশন, কৃষিতে ডেটা ড্রিভেন ইনোভেশন—সবই স্মার্ট অর্থনীতির প্রতিচ্ছবি। এগ্রিটেক, এডটেক, ই-কমার্স ও আইটি সেক্টর ইতিমধ্যেই জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
৩) স্মার্ট গভর্নমেন্ট : এই স্তম্ভের মূল উদ্দেশ্যই হলো সরকারি পরিষেবাগুলোকে ডিজিটালাইজ করা এবং জনগণের সেই পরিষেবাগুলোর ব্যবহার যাতে আর ও সহজ হয় তা নিশ্চিত করা। স্মার্ট সরকার নাগরিকদের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এক সময়ের দীর্ঘ লাইনের পরিবর্তে আজ ভ্যাট রিটার্ন, জন্মনিবন্ধন, ভূমি দলিল, ইউটিলিটি বিল—সবকিছুই হচ্ছে অনলাইনে।
৪) স্মার্ট সোসাইটি : সামাজিক সচেতনতা, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, জেন্ডার ইক্যুইটি—এসবই এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক ভিত্তিক নারী উদ্যোক্তা, ইউটিউব শিক্ষক, ফ্রিল্যান্সিং—সব মিলিয়ে একটি উদ্ভাবনী সমাজ গড়ে উঠছে।
এই চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করেই স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ উন্নত জীবনযাত্রার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
কর্পোরেট সেক্টরের ভূমিকা
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কর্পোরেট সেক্টর কেবল সহায়ক নয়, বরং মূল চালিকাশক্তি হতে পারে। নিচে কয়েকটি খাত উল্লেখ করা হলো:
টেলিকম: Robi বা Grameenphone-এর মতো কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র সংযোগই দেয় না, বরং ই-লার্নিং, হেলথ ইনিশিয়েটিভসহ বিভিন্ন স্মার্ট সল্যুশন দিচ্ছে।
বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং: bKash, Nagad-এর মতো মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস গ্রামীণ জনগণের হাতেও অর্থনৈতিক ক্ষমতা পৌঁছে দিয়েছে।
লজিস্টিক ও রাইড-শেয়ারিং: Pathao, Shohoz, Foodpanda ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট পরিবহন ও হোম-ডেলিভারিতে বিপ্লব এনেছে।
হোম গ্রোন টেক: Walton নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে স্মার্ট টিভি, ল্যাপটপ প্রভৃতি তৈরি করে দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশে বড় ভূমিকা রাখছে।
এডটেক ও এগ্রিটেক: 10 Minute School, iFarmer, Shikho ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষা ও কৃষিখাতকে স্মার্ট করে তুলছে।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
সম্ভাবনা
- স্থানীয় বাজারে প্রযুক্তি গ্রহণের হার বাড়ছে
- তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ও নতুন নতুন স্টার্টআপ
- বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সুযোগ
চ্যালেঞ্জ
- ডিজিটাল স্কিলের ঘাটতি – অনেকেই এখনো প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ নন
- ইকুইটি গ্যাপ – শহর-গ্রাম বৈষম্য
- নীতিগত সহায়তা – অনেক সময় কর্পোরেট ও সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব
- ডাটা সিকিউরিটি ও সাইবার সেফটি – স্মার্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি
উপসংহারঃ
Smart Bangladesh কেবল সরকারের একার পরিকল্পনা নয়—এটি হতে হবে সরকার, কর্পোরেট সেক্টর এবং জনগণের সম্মিলিত যাত্রা। কর্পোরেট সেক্টরের উদ্ভাবনী শক্তি এবং সরকারের নীতিগত সহায়তার সমন্বয়ে আমরা গড়তে পারি একটি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ভবিষ্যতপ্রস্তুত বাংলাদেশ।
পাঠকের মন্তব্য