ঢাকা, জুলাই ৩০, ২০২৫ – যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় নতুন “Reciprocal Tariff” নীতির আওতায় বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ওপর আমদানিতে ১০% সাধারণ শুল্ক এবং দেশভিত্তিক উচ্চ শুল্ক আরোপ কার্যকর হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৩৫% থেকে ৩৭% পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক চিঠি ট্রাম্প প্রশাসন ২৪ জুলাই বাংলাদেশ সরকারকে পাঠিয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।
???? বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক তৎপরতা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিবকে একটি অবস্থানপত্র (Position Paper) পাঠিয়েছে এবং একটি অনলাইন বা সরাসরি বৈঠকের আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রয়েছে। আমন্ত্রণ পাওয়া গেলে, বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ২৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনায় অংশ নেবে।
বাংলাদেশ ইতিপূর্বেই যুক্তরাষ্ট্রের গম, এলএনজি, বিমান এবং কৃষিপণ্য আমদানির প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে এবং সম্ভাব্যভাবে শুল্ক রেয়াতের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
রপ্তানি খাতে প্রভাব ও ঝুঁকি
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (BGMEA) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩,৩২২টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরাসরি রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। ৩৫% থেকে ৫০% শুল্ক আরোপ এই শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।
ইতিমধ্যে অনেক বিদেশি বায়ার মার্কিন বাজারে অর্ডার নিশ্চিত করতে দেরি করছে বা শুল্ক পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অর্ডার স্থগিত রাখছে। যদিও ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত রপ্তানি ২১% বৃদ্ধি পেয়েছে, এই শুল্ক কার্যকর হলে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৌশলগত রণনীতি ও আলোচনার পথ
বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে সক্রিয়ভাবে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে। BGMEA ইতোমধ্যে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের প্রভাবিত করতে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। এরই অংশ হিসেবে, ১৫ জুলাই একটি ৫ বছরের গম আমদানির সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ, যার মাধ্যমে মার্কিন বাজারের প্রতি আস্থা ও সহযোগিতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য কাঠামোতে পরিবর্তনের প্রয়োজন
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা হারাতে যাচ্ছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি একটি বড় বাস্তবতায় চোখ খুলে দিয়েছে—যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কাঠামোতে পরিবর্তন অপরিহার্য।
প্রয়োজনীয় করণীয়সমূহ:
-
বাজার বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা (ইইউ, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া)
-
রপ্তানি পণ্যের পরিধি বাড়ানো
-
প্রযুক্তি ও হালকা প্রকৌশল খাতে রপ্তানি প্রবাহ বাড়ানো
-
দীর্ঘমেয়াদী শুল্ক কূটনীতি ও কৌশলগত বিনিয়োগ
এই পরিস্থিতি শুধু তাৎক্ষণিক বাণিজ্য নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়বিন্দু হয়ে উঠতে পারে। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও কৌশলগত রূপরেখা গ্রহণ করলেই এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব।
পাঠকের মন্তব্য