আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে ২০২৫ সালের অধ্যাদেশ জারি করেছে। নতুন এই সংশোধনে বলা হয়েছে—একাধিক নিবন্ধিত দল জোট গঠন করলেও জোটের মনোনীত প্রার্থী অন্য কোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না; বরং তাঁকে নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে এই আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এর ফলে রাজনৈতিক জোটগুলোর জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আইন পাসের পেছনের প্রেক্ষাপট
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন থেকেই বিএনপি এ বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানায় এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে মতামত দেয়।
বিএনপি দাবি করে, এই সংশোধনের ফলে জোট রাজনীতি ও প্রতীকভিত্তিক নির্বাচনী ঐক্য ভেঙে যাবে, যা গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী।
তবে ভিন্ন অবস্থান নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা মনে করে, প্রতিটি দলকে নিজস্ব পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হলে দলীয় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বাড়বে।
সূত্র জানায়, সরকার প্রথমে এই বিধানটি বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত তা বহাল রেখেই অধ্যাদেশ জারি করে।
আরপিওর বাইরেও একগুচ্ছ সংশোধন
শুধু আরপিও নয়, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে আরও বেশ কয়েকটি আইন ও বিধি সংশোধন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
-
ভোটার তালিকা আইন,
-
নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন,
-
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন,
-
ভোটকেন্দ্র নীতিমালা,
-
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা,
-
সাংবাদিক নীতিমালা প্রভৃতি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত আইন অনুযায়ী দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধিও শিগগির জারি করা হবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও জনমতের প্রতিফলন
বিএনপি নেতাদের মতে, এই সংশোধন গণতান্ত্রিক ঐক্যের ওপর আঘাত এবং প্রতীকভিত্তিক জোট রাজনীতির অবসান ঘটাবে। অন্যদিকে, সরকারপন্থি নেতারা বলছেন, এটি রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও দলীয় দায়বদ্ধতার একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তনের ফলে প্রার্থী নির্বাচনে নতুন কৌশল নিতে হবে প্রতিটি দলকে। জোট থাকলেও প্রার্থীদের নিজ দলের পরিচয় ও প্রতীকে ভোট চাওয়া হবে এখন বাধ্যতামূলক।
মানবিক ও গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন
জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা ও গণতন্ত্রের স্থায়িত্বের জন্য নির্বাচনী আইনের স্বচ্ছতা অপরিহার্য। তবে এই সংশোধন ভোটারদের সামনে একই জোটের বিভিন্ন প্রতীক হাজির করবে, যা অনেক ভোটারের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।
সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি—নির্বাচন কমিশন যেন নতুন এই আইন বাস্তবায়নে জনগণের মতামত ও বোঝাপড়াকে অগ্রাধিকার দেয়।
উপসংহার
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি পদক্ষেপ। তবে এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রকে কতটা শক্তিশালী করবে, না দুর্বল করবে—তা নির্ভর করবে এর বাস্তবায়ন ও জনআস্থা অর্জনের পদ্ধতির ওপর।
পাঠকের মন্তব্য