রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড টানা তৃতীয় বছরের মতো লোকসানের ধারায় রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭২ কোটি টাকা, যা আগের দুই বছরের ধারাবাহিক লোকসানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট ক্ষতিকে নিয়ে গেছে ১ হাজার ৬৮১ কোটিতে।
তিন বছরে ক্রমবর্ধমান ক্ষতির চিত্র
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার দাখিল করা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য অনুযায়ী,
-
২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান ছিল প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা,
-
২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৫৯ কোটি টাকায়,
-
আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লোকসান দাঁড়ায় ৭৭২ কোটি টাকায়।
অর্থাৎ, গত তিন বছরে মোট ১,৬৮১ কোটি টাকার লোকসান গুনেছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস।
তবুও নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
লোকসানে থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এই লভ্যাংশ ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য ২৪ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস।
রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ নভেম্বর ২০২৫।
লোকসানের পেছনে কারণ কী?
জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে,
-
গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি,
-
চলতি মূল্যের সমন্বয়ের অভাব,
-
বকেয়া বিল আদায়ে দুর্বলতা এবং
-
উচ্চ আমদানি নির্ভরতা
তিতাস গ্যাসের আর্থিক দুরবস্থার অন্যতম কারণ।
এছাড়া গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্কের পুরোনো অবকাঠামো এবং শিল্প খাতে অনিয়মিত সরবরাহও কোম্পানির আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন তারা।
বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা
তিতাস গ্যাস একসময় পুঁজিবাজারে অন্যতম স্থিতিশীল ও লাভজনক কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু টানা লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কোম্পানিটি কাঠামোগত সংস্কার, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আর্থিক পুনর্গঠন ছাড়া এই ধারা থেকে বের হতে পারবে না।
তিতাসের অবস্থান
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত তিতাস গ্যাস বর্তমানে দেশের বৃহত্তম গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি শিল্পঘন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে।
কিন্তু ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি ব্যয় এবং রাজস্ব ঘাটতি এখন তিতাসকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
উপসংহার
টানা তিন বছর লোকসান সত্ত্বেও তিতাস গ্যাসের লভ্যাংশ ঘোষণা অনেকের কাছে ইতিবাচক সংকেত হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, “গ্যাসের দাম সমন্বয়, দুর্নীতি রোধ ও সঠিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ছাড়া তিতাসের পুনরুদ্ধার কঠিন।”
সারসংক্ষেপ:
-
২০২৪-২৫ অর্থবছরে লোকসান: ৭৭২ কোটি টাকা
-
তিন বছরে মোট লোকসান: ১,৬৮১ কোটি টাকা
-
নগদ লভ্যাংশ: ২%
-
এজিএম: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
-
রেকর্ড ডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫
সম্পর্কিত:
তিতাসের এ লোকসান দেশের জ্বালানি খাতের সার্বিক চ্যালেঞ্জ ও নীতিগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকেও নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।
পাঠকের মন্তব্য