কিশোরগঞ্জের ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতা।
সোমবারের শান্তিপূর্ণ রেল অবরোধের পর মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে নৌপথ অবরোধ শেষে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন—আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) একযোগে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ করা হবে।
রেল অবরোধে হঠাৎ উত্তেজনা
অবরোধকারীরা জানান, সোমবারের রেল অবরোধ কর্মসূচি সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল।
কিন্তু শেষ পর্যায়ে ট্রেনচালকের হঠাৎ হুইসেল বাজানোয় জনতা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
নিজেদের রক্ষা করতে কয়েকজন পাথর নিক্ষেপ করেন, যা থেকে সামান্য বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
অবরোধকারীরা অভিযোগ করেন,
“এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায় স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি)। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম, কিন্তু তাদের দায়িত্বহীন আচরণে পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়।”
তারা আরও বলেন,
“আমরা ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে পূর্বেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে আমাদের থামানো যাবে না।”
নৌপথ অবরোধে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ভৈরব বাজার লঞ্চঘাট ও কার্গোঘাট এলাকায় শুরু হয় নৌপথ অবরোধ।
প্রায় এক ঘণ্টা নৌ চলাচল বন্ধ থাকে।
এ সময় শতাধিক নৌযান, লঞ্চ ও ট্রলার স্থগিত থাকে।
অবরোধ চলাকালে বক্তৃতা দেন—
ভৈরব পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম পাভেল, জেলা আন্দোলনের নেতা মাওলানা সাইফুল ইসলাম শাহারিয়া, গণঅধিকার পরিষদের নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, এবং ছাত্রনেতা জুনাইদ প্রমুখ।
তারা বলেন,
“ভৈরব একটি ঐতিহাসিক শহর। শিল্প, বাণিজ্য ও যোগাযোগের দিক থেকে এটি জেলা হওয়ার সব যোগ্যতা রাখে। প্রশাসনের নীরবতা মেনে নেওয়া হবে না।”
প্রশাসনের তৎপরতা
অবরোধ চলাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে现场 উপস্থিত ছিলেন ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এএইচএম মো. আজিমুল হক,
ভৈরব নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান,
এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন,
“ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার একযোগে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।”
আন্দোলনের পটভূমি ও জনদাবি
ভৈরববাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা জেলা প্রশাসনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্তি দাবি করে আসছেন।
শিল্পনগরী, রেল জংশন ও নদীবন্দর হিসেবে পরিচিত এই শহর অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, কিন্তু প্রশাসনিকভাবে এখনও উপজেলাতেই সীমাবদ্ধ।
স্থানীয়দের বক্তব্য,
“ভৈরবকে জেলা করা হলে শুধু স্থানীয় নয়, আশপাশের অন্তত তিনটি উপজেলার মানুষও সরাসরি প্রশাসনিক সেবা পাবে।”
মানবিক প্রেক্ষাপটে আন্দোলন
ভৈরবের আন্দোলন এখন শুধুই রাজনৈতিক নয়—এটি পরিণত হচ্ছে অধিকার ও উন্নয়নের আন্দোলনে।
শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী ও সাধারণ নাগরিকদের অংশগ্রহণে এই আন্দোলন সম্মিলিত জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়ে উঠেছে।
মানুষের দাবি স্পষ্ট—
“ভৈরবকে জেলা করা হোক, যাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক সেবা হাতের নাগালে আসে।”
উপসংহার
ভৈরবের মানুষ এখন নজর রাখছে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে।
তাদের প্রত্যাশা—সংলাপ ও সংবেদনশীলতার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান আসবে।
কারণ, উন্নয়ন ও মানবিক ন্যায়বিচার—এই দুইয়ের সমন্বয়েই গড়ে উঠবে প্রকৃত “মানুষের জেলা”।
পাঠকের মন্তব্য