ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে উত্তেজনা, কৌতূহল ও জনআস্থা নিয়ে প্রশ্ন। আগামী ভোটের মাঠে কে নামবে, কোন প্রতীকে, আর কতগুলো দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে—এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ। কারণ আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করবে ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা। একই সঙ্গে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল রবিবার কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। সেখানে তিনি জানান, “দল নিবন্ধনের কাজ প্রায় শেষ। মাঠপর্যায় থেকে কিছু অতিরিক্ত তথ্য আসছে, সেগুলো যাচাই করেই আমরা এই সপ্তাহেই নিবন্ধন সম্পন্ন করব। আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে, তাই বিলম্ব না করে তা শেষ করার চেষ্টা করছি।”
নতুন দলের অপেক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দল যোগ মানেই এক নতুন অধ্যায়। কে আসছে নতুন প্রতীকে—এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। রাজনৈতিক মহল বলছে, এ বছর নিবন্ধনের জন্য একাধিক নতুন দল আবেদন করেছে। এর মধ্যে কিছু দল মাঠপর্যায়ে কাজ করছে, আবার কিছু দল এখনো কাগজপত্র যাচাইয়ের পর্যায়ে।
ইসি সচিব জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে শিগগিরই জানানো হবে।
নির্বাচন রোডম্যাপ ও প্রস্তুতি
ইসি ইতিমধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “সব কিছু শতভাগ নিখুঁতভাবে করা সম্ভব নয়। মাঠের বাস্তবতা অনুযায়ী কিছু জায়গায় সামঞ্জস্য আনতে হয়। তবে সামগ্রিকভাবে আমাদের প্রস্তুতি ভালো। কোনো আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তার কারণ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন হলো একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সময়, পরিস্থিতি ও বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হয়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে—একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।”
কমনওয়েলথের পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা
বৈঠকে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়। তারা বিশেষভাবে জানতে চেয়েছে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ এবং নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো নিয়ে।
আখতার আহমেদ বলেন, “তাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। তারা জানতে চেয়েছেন আমরা কীভাবে ভোটকেন্দ্র নিরাপদ রাখব, প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব এবং জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
ককটেল বিস্ফোরণ ও নিরাপত্তা প্রশ্ন
শনিবার রাতে ইসি ভবনের দক্ষিণ পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। তবে সচিব বলেন, “বিস্ফোরণটি ভবনের বাইরে ঘটেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে আটক করেছে। প্রয়োজনে ইসি নিজেও মামলা করবে। আমাদের কাছে নিরাপত্তা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই মূল চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচন শুধু রাজনীতিকদের নয়, জনগণেরও প্রত্যাশার প্রতিফলন।
ভোটকেন্দ্র মানে গণতন্ত্রের প্রাণ, যেখানে এক নাগরিকের একটি ভোট ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করে। তাই ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা শুধু প্রশাসনিক কাজ নয়, এটি একটি মানবিক দায়বদ্ধতা—যেখানে প্রতিটি ভোটারের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও বিশ্বাসের মূল্য দিতে হয়।
নির্বাচন কমিশন আজ যখন ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে, তখন দেশের কোটি ভোটারের চোখ থাকবে সেই ঘোষণায়। কারণ এটি কেবল সংখ্যার তালিকা নয়—এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার নতুন মানচিত্র।
পাঠকের মন্তব্য