
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ শুরু করছেন তার প্রথম এশিয়া সফর—দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। সফরের শেষ দিন তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে।
ওয়াশিংটনের সূত্রে জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের দেখা হতে পারে—এমন গুঞ্জন উঠলেও, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে এমন কোনো বৈঠক সূচিতে নেই।
ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক চুক্তি করা। জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নানা দেশে শুল্ক আরোপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে আবারও বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন।
সফরের শুরু হবে মালয়েশিয়ায়, যেখানে তিনি অংশ নেবেন আসিয়ান (ASEAN) সম্মেলনে। প্রথম মেয়াদে এই সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার পর এবার তার উপস্থিতি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে তিনি একটি বাণিজ্য চুক্তি সই করতে পারেন, পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের তদারকি করবেন—যা অনেকে তার নোবেল শান্তি পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবে দেখছেন।
মালয়েশিয়া সফর শেষে ট্রাম্প সোমবার পৌঁছাবেন জাপানের রাজধানী টোকিওতে। মঙ্গলবার তিনি সাক্ষাৎ করবেন জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে। সদ্য দায়িত্ব নেওয়া তাকাইচি রক্ষণশীল নীতির জন্য পরিচিত। জাপান ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতির বড় আঘাত থেকে তুলনামূলকভাবে রেহাই পেয়েছে, যদিও ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে “অন্যায্য বাণিজ্য ভারসাম্য যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হবে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) সম্মেলন। বুধবার তিনি পৌঁছাবেন বন্দরনগরী বুসানে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ ও মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধানদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক—দ্বিতীয় মেয়াদে এটাই তাদের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠকটি ঘিরে বিশ্ববাজারে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কনীতি ও চীনের বিরল খনিজ রপ্তানিতে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনে রয়েছে। প্রথমে ট্রাম্প বৈঠক বাতিলের হুমকি দিলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলান। তিনি জানিয়েছেন, আলোচনার প্রথম বিষয় হবে ফেন্টানিল পাচার রোধ এবং পাশাপাশি বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্গঠন।
ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন বলেছেন, এই বৈঠক প্রেসিডেন্টের জন্য “একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ।” তার ভাষায়, “এটি যেন লোহার পাশা ছোড়ার মতো—সফল হলে ফল বড়, ব্যর্থ হলে বিপদও বড়।” অন্যদিকে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশ্লেষক রায়ান হাস মনে করেন, “এই বৈঠকে সম্পর্কের মৌলিক পরিবর্তন আসবে না; এটি কেবল দুই দেশের চলমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতার অংশ।”
সব মিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই এশিয়া সফরকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ তুঙ্গে। সম্মেলন, কূটনৈতিক বৈঠক, বাণিজ্য ও শান্তিচুক্তি—সব মিলিয়ে এটি তার দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে উচ্চপ্রোফাইল ও আলোচিত কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য