জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছে বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এই বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস, ভোটের সময়সূচি, নির্বাচনকালীন প্রশাসন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নিশ্চয়তা—এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সংলাপ
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, একটি “অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য” নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা হতে হবে সক্রিয় ও স্বচ্ছ। এ কারণেই এই বৈঠককে তারা গণতান্ত্রিক সংলাপের অংশ হিসেবে দেখছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি তুলেছেন—
-
আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিতে হবে;
-
ভোটের সময়সূচি যেন রমজানের আগেই এমন সময়ে নির্ধারণ করা হয়, যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে;
-
মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে;
-
এবং নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগ দিতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে।
ইসি ইতিমধ্যে বৈঠক করেছে অন্যদের সঙ্গেও
এর আগে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেছে ইসি।
কমিশন বলছে, এই ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ভিত্তি গড়ে তোলাই তাদের উদ্দেশ্য।
ভোট ফেব্রুয়ারির আগে, তবে তারিখ অনিশ্চিত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগেই জানিয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই, অর্থাৎ রমজানের আগেই ভোট আয়োজন করা হবে। তবে এখনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সময় যত গড়াচ্ছে, নির্বাচন প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক সংলাপ—দুটিই একই সঙ্গে গতি পাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।
বিশ্লেষণ: বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের ভোটারদের বড় অংশ এখনো নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফেরানোর অপেক্ষায়। বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংকট সেই আস্থায় ভাঙন ধরিয়েছে। তাই বিএনপি ও অন্যান্য দল যখন সরাসরি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসছে, তখন অনেকেই এটিকে “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক নতুন সূচনা” হিসেবে দেখছেন।
পাঠকের মন্তব্য