এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সঙ্গে সরকারের বৈঠক চলছে রাজধানীতে। এই বৈঠককে ঘিরে শিক্ষক সমাজে দেখা দিয়েছে আশার আলো—দীর্ঘ আন্দোলন ও অনশনের অবসান ঘটবে কি না, এখন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন হাজারো শিক্ষক।
জোটের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন আজিজী আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান,
“সকাল ১১টার দিকে ১৫ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত আছেন। আজকের আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকটের সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
তবে বৈঠকের বাইরে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। আজ অন্তত পাঁচজন অনশনরত শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারীদের অনেকে বলছেন, দাবি আদায়ে তাঁরা শেষ পর্যন্ত অবস্থান নেবেন, কারণ এটি কেবল পেশাগত নয়—বেঁচে থাকার লড়াই।
দাবি ও আন্দোলনের পটভূমি
সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁদের অন্যতম প্রধান দাবি—বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশে উন্নীত করা।
গত ১২ অক্টোবর তাঁরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। কিন্তু সেখানে পুলিশের জলকামান, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেডে আন্দোলন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন, পুলিশের আচরণের প্রতিবাদ জানান এবং দেশব্যাপী কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
ক্রমে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে—শাহবাগ মোড় অবরোধ, যমুনা অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা, এবং ১৭ অক্টোবর থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু হয়।
“দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে”
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকার তাঁদের দাবিতে সাড়া না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না। অনশনে থাকা এক শিক্ষক বলেন,
“আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ি, কিন্তু নিজেদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ন্যায্য প্রাপ্য না পেলে এভাবে কষ্ট করে টিকে থাকা অসম্ভব।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কয়েকজন অনশনরত শিক্ষক ইতিমধ্যেই ডিহাইড্রেশন ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাঁদের হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সমাধানের প্রত্যাশা
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি উপস্থিত আছেন। আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন শিক্ষক সমাজ।
একজন আন্দোলনকারী শিক্ষক বলেন,
“আমরা সংঘাত চাই না। আমরা সমাধান চাই। সরকার যদি আমাদের কণ্ঠ শোনে, তাহলে ক্লাসরুমে ফিরতে আমরা প্রস্তুত।”
পাঠকের মন্তব্য