বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে গত ৩০ জুন। ১ হাজার ৭১০টি শূন্য পদের বিপরীতে সুপারিশ করা হয় ১ হাজার ৬৯০ জনকে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ৩৭২ জন ছিলেন ইতোমধ্যে অন্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত—অর্থাৎ ‘রিপিট ক্যাডার’।
এই অসঙ্গতি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পিএসসি সিদ্ধান্ত নেয় বিধি সংশোধন করার, যাতে রিপিট ক্যাডারদের পরিবর্তে মেধাক্রম অনুযায়ী পরবর্তী প্রার্থীদের সুপারিশ করা যায়। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও ফাইলটি প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রধান উপদেষ্টার টেবিলেই আটকে আছে।
ফলস্বরূপ, শুধু রিপিট ক্যাডার নয়—১ হাজার ৩১৮ জন অরিপিট প্রার্থীরও নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গেছে। কেউ চিকিৎসা পরীক্ষার অপেক্ষায়, কেউ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছেন না।
অপেক্ষার যন্ত্রণা: অনিশ্চয়তার দিনগুলো
প্রার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করছেন। কেউ লিখছেন, “আমাদের জীবনের সেরা সুযোগটা শুধু একটা ফাইল আটকে থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে।” আবার কেউ বলছেন, “বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নিয়োগ শুরু হচ্ছে না—এ কেমন অন্যায়?”
একজন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী বলেন,
“আমরা ২০২২ সালের মে মাসে প্রিলিমিনারি দিয়েছি, এখন ২০২৫ সাল শেষ হতে চলেছে। তিন বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এখনো চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিবার, সমাজ—সব জায়গায় চাপের মধ্যে আছি।”
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পেছনের গল্প
৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ২৭ মে। উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ৭০৮ জন। পরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১১ হাজার ৭৩২ জন, এবং দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ও যাচাই প্রক্রিয়া শেষে ১ হাজার ৬৯০ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়।
সাধারণ নিয়মে, ফল প্রকাশের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়, এবং দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভেরিফিকেশন শুরু হয়। কিন্তু এবারের ক্ষেত্রে বিধি সংশোধনের জটিলতা সেই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্থবির করে দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আবেদন
সারজিস আলম ও প্রার্থীরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার একটিমাত্র স্বাক্ষরই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে। তাঁরা আশা করছেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত ফাইলটি অনুমোদন দেবেন, যাতে দেশের তরুণরা নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করতে পারেন।
একজন প্রার্থী আবেগভরে বলেন,
“আমাদের জীবন আটকে আছে কেবল একটা প্রশাসনিক ফাইলে। আমরা শুধু ন্যায্য সুযোগটাই চাই।”
এমন মানবিক অনুরোধের মুখে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছেন—“ফাইলটা ছাড়ুন, ভবিষ্যৎ বাঁচান।”
পাঠকের মন্তব্য