
অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি, বলেছেন যে “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”-এর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে কমিশন আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই সরকারের কাছে একটি সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ জমা দেবে।
আজ জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
ড. রীয়াজ বলেন, “কমিশনের মেয়াদ ইতোমধ্যেই ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই মেয়াদেই আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুপরিকল্পিত সুপারিশ সরকারকে উপস্থাপন করব, যাতে সনদ বাস্তবায়নে কোনো ব্যত্যয় না ঘটে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব যে, যেই জাতীয় সনদ এতদূর এসেছে, সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা সরকারকে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ উপস্থাপন করবো যাতে সনদের প্রতিটি ধাপের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত থাকে।”
তিনি জানান, আগামীকালের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তার ভাষায়, “এই সনদ শুধু গত এক বছরের পরিশ্রমের ফল নয়, বরং বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রের প্রত্যাশা, রাষ্ট্র সংস্কারের সংগ্রাম ও স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ।”
তিনি বলেন, “পথচলায় মতভেদ ছিল, মতপার্থক্যও ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা কাল উপস্থিত থাকবেন এবং সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আরেকটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবেন বলে আমরা আশাবাদী।”
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, “এনসিপি যে বক্তব্য দিয়েছে, আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছি। তবে এটাও সত্য, এনসিপির অনেকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারিতে ছিলেন। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা মনে করি, জাতীয় সনদের একটি আইনি ভিত্তি থাকা অত্যাবশ্যক এবং কমিশনের মেয়াদকালেই এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ আমরা দেব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করছি, এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দল শেষ পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে এবং সনদ বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে, যেহেতু এই প্রক্রিয়ার পথরেখা তৈরিতে তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”
স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনের পথচলায় নানা প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলকে আইনি ভিত্তি দেওয়া যাবে না— এমন কোনো অনড় নিয়ম নেই। মতপার্থক্য থাকবে, তবে মূল জায়গায় আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।”
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। দেশবাসী লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে জেনেছেন কার কী অবস্থান। এই স্বচ্ছতা এবং পারস্পরিক প্রতিশ্রুতিই সনদের ভিত্তি।”
তার মতে, “এই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াটি শেষ হচ্ছে না, বরং এটি একটি নতুন সূচনা। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল অঙ্গীকারাবদ্ধ, এবং আমরা বিশ্বাস করি, সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথচলা এখান থেকেই শুরু হবে।”
উল্লেখ্য, “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”-এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আগামীকাল, ১৭ অক্টোবর, বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য