বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচনার লক্ষ্যে আজ শুক্রবার স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে ‘ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ’। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ অনুষ্ঠানকে জাতির ঐক্যের প্রতীক আখ্যা দিয়ে সকল নাগরিককে প্রত্যক্ষ বা ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে জানানো হয়, বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক, নারী সংগঠন, প্রযুক্তি উদ্ভাবক এবং বিদেশি কূটনীতিকরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
‘ঐক্যের এই মুহূর্ত ইতিহাসে স্থান পাবে’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
“আমরা দেখাতে চাই—রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পার্থক্য সত্ত্বেও আমরা এক ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে দাঁড়াতে পারি। প্রতিটি বাংলাদেশি, যেখানে থাকুন না কেন—বাড়িতে, অফিসে, দোকানে, কারখানায়, মাঠে কিংবা ক্ষেতে—এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হোন। এটি আমাদের সম্মিলিত আশার দিন।”
তিনি আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে গর্ব ও আশার এই মুহূর্তটিকে একসঙ্গে উদযাপন করার, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানে—বাংলাদেশ পারে, যদি সে একসাথে থাকে।”
জাতীয় সংহতির নতুন দিগন্ত
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এই সনদকে ‘জাতীয় সংহতির নীলনকশা’ হিসেবে বর্ণনা করছে। এর মূল লক্ষ্য হলো স্বচ্ছ রাজনীতি, সামাজিক ন্যায়বিচার, টেকসই অর্থনীতি ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন।
অধ্যাপক ইউনূসের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সনদে অংশগ্রহণকারীদের সম্মতি অনুযায়ী ভবিষ্যতের জাতীয় নীতি নির্ধারণে জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
জনগণের প্রত্যাশা ও অংশগ্রহণ
রাজধানীজুড়ে ইতোমধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে সনদ নিয়ে আলোচনা করছে। অনেকেই পোস্টার ও ব্যানার হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষার্থীরা এই ঘটনাকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখতে চাচ্ছে।
ঢাকার গুলশানের এক তরুণ উদ্যোক্তা সায়েম রহমান বলেন, “জুলাই সনদ আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। আমরা রাজনীতি নয়, মানবতার জায়গা থেকে ঐক্য দেখতে চাই।”
গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার
প্রধান উপদেষ্টা তার বার্তায় সব টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মাকে উদযাপনের মুহূর্ত।”
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ছাড়াও অন্তত ৩০টির বেশি বেসরকারি চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।
আন্তর্জাতিক আগ্রহ
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এর প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও এই অনুষ্ঠানকে “Bangladesh’s Moment of Unity” বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য