বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ইঞ্জিন সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে মিটারগেজ লাইনে এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে বহু যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন। যাত্রীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে, ব্যবসায়ী মহল ভুগছে পরিবহন সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে চীন এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে। ২০টি আধুনিক মিটারগেজ ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে অনুদান হিসেবে দেবে চীন সরকার।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের এই ইঞ্জিনগুলো আগামী দুই বছরের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। ইঞ্জিনগুলোর সঙ্গে থাকবে পাঁচ বছরের খুচরা যন্ত্রাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা। সব খরচ বহন করবে চীন, বাংলাদেশকে কেবল শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে।
সংকটের চিত্র
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন—
“রেলে ইঞ্জিনের সংকট আছে। বিশেষ করে মিটারগেজ ইঞ্জিনের সংকট বেশি। এ পরিস্থিতিতে চীনা অনুদান হিসেবে ইঞ্জিন পেলে উপকার হবে।”
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে মিটারগেজ ট্রেন চলাচল করে। অথচ ইঞ্জিনের অভাবে চলতি বছরের জুন মাসে শুধু পূর্বাঞ্চলে ৪৩৫টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে এক হাজারের বেশি কনটেইনার—ইঞ্জিনের অভাবে সেগুলো পরিবহন করা যাচ্ছে না।
যাত্রীদের প্রতিদিনের যাতায়াতে যেমন দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে, তেমনি কৃষক ও ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য সময়মতো রাজধানীতে না পৌঁছাতে বাজারে সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
মানবিক দিক
একজন সাধারণ যাত্রী যখন প্রতিদিন ট্রেন বাতিলের মুখোমুখি হন, তখন তার জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী—সবাই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। চীনের এই অনুদান তাই শুধু রেলের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনের স্বস্তি ফিরিয়ে আনার একটি মানবিক উদ্যোগ।
মিটারগেজ ইঞ্জিন আসলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দ্রুত কনটেইনার পরিবহন সম্ভব হবে, যাত্রী ট্রেন চলাচল নিয়মিত হবে এবং দেশের অর্থনীতি স্বস্তি পাবে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
এর আগে ভারতও কয়েক দফায় পুরোনো ব্রডগেজ ইঞ্জিন অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে চীন প্রথমবারের মতো মিটারগেজ ইঞ্জিন দিচ্ছে। এর মাধ্যমে চীনের নাম উঠবে বাংলাদেশ রেলওয়ের দশম ইঞ্জিন সরবরাহকারী দেশ হিসেবে।
চীন পূর্বেও বাংলাদেশকে রেল কোচ সরবরাহ করেছে, সেগুলো ইতিমধ্যেই ভালো সেবা দিয়েছে। এবার ইঞ্জিন আসলে রেলের সক্ষমতা নতুন মাত্রা পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের পদক্ষেপ
চীনা অনুদান আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
চীনের এই সহায়তা এসেছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের প্রেক্ষাপটে। আলোচনার সময়ই চীন ইঞ্জিন দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। বর্তমানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং চীনা দূতাবাস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছে।
মানুষের প্রত্যাশা
যাত্রীরা বলছেন—
“যদি নতুন ইঞ্জিন দ্রুত আসে, তবে ট্রেন ভ্রমণ আবারও নির্ভরযোগ্য হবে।”
একজন ব্যবসায়ী জানান—
“চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পড়ে থেকে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ইঞ্জিন এলে আমরা স্বস্তি পাব।”
উপসংহার
চীনের অনুদান শুধু ইঞ্জিন এনে দেবে না, এটি ফিরিয়ে দেবে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের স্বস্তি, ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক নিশ্চয়তা এবং দেশের অর্থনীতির গতি। এক কথায়, ২০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন আসছে জীবনে নতুন আশার আলো নিয়ে।
পাঠকের মন্তব্য