সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সতর্কতামূলক পোস্টে দাবি করেছেন, বিভিন্ন রুটে পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট দেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তিনি লেখেন, এসব নকল নোট অত্যন্ত নিবিড়ভাবে প্রস্তুত—কাগজ, হলোগ্রাম ও দরকারি নিরাপত্তা চিহ্নগুলো এতটাই নিখুঁত যে খালি চোখে এবং ব্যাংকের যাচাই-মেশিনেও সহজে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এই দাবিটি প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর দেশি অনেক গণমাধ্যমও বিষয়টি নজরে এনেছে এবং তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
জুলকারনাইন তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, “বিশেষ ব্যবস্থায় দেশটির নিজস্ব মুদ্রা ছাপানোর ফ্যাসিলিটিতে এসব নোট প্রিন্ট করা হয়েছে” এবং সেই সঙ্গে দাবি করেন যে এসব নকল নোট ন্যূনতম মূল্যে দেশভিত্তিক জালনোট কারবারিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে — যাতে তা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ভ্যবস্থাগত অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি সচেতন নাগরিক ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক ও সংবেদনশীল থাকার আহ্বান জানান।
এ নিয়ে স্থানীয় অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমগুলোও সংবাদ প্রকাশ করেছে; তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই খবর ভাইরাল হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতা অবলম্বন করেছে এবং বিষয়টি তদন্ত করতে শুরু হয়েছে বলে পাওয়া তথ্য রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র বা জাল নোটের ধরনে-পরিমাপে প্রকাশ্য বিবৃতি পাওয়া যায়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
ওই দাবির সম্ভাব্য প্রভাব — মানবিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি
বৃহৎ পরিমাণ জাল নোট চলাচল করলে তা অর্থনীতির ক্ষতি ছাড়াও সাধারণ মানুষের জীবনে তাত্বিক ও বাস্তব দু’ধরনের ঝুঁকি জাগাতে পারে—
-
লোকালয়ে ব্যাঙ্কিং লেনদেনে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা ও আস্থাহানি;
-
নিম্ন আয়ের মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর অপ্রত্যাশিত চাপ; এবং
-
বাজারে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যবোধে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা।
এই কারণে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, সিস্টেমিক অর্থনৈতিক প্রশাসন, বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ খাত, এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী—সবার সমন্বিত প্রস্তুতি প্রয়োজন। খবরগুলোতে উল্লেখিত সরকারি নিরাপত্তা সূত্র বলেছেন যে সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এই অপতৎপরতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। তবু জনসচেতনতার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে বলা হচ্ছে যাতে লোকজন সন্দেহজনক নোট পেলে ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জানায়।
কী বলা হচ্ছে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সূত্রে
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দেশের সীমান্তবদ্ধ ও অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই ধরনের অপতৎপরতা সম্পর্কে অবগত এবং সীমিত সূত্রে কিছু নকল নোট বা তাতে ব্যবহৃত উপকরণের নমুনা পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে; তবে বড় পরিসরে প্রমাণ পেতে তদন্ত জরুরি। একই সঙ্গে সাংবাদিকের দায়ী দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। জরুরি নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ও ব্যাংকিং সিস্টেমে মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশও প্রত্যাশিত।
জনসচেতনতা ও প্রস্তাবিত পরামর্শ (প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা)
এই ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য কয়েকটি সহজ কিন্তু কার্যকরী পরামর্শ প্রাসঙ্গিক—
-
সন্দেহজনক নোট হাতে পেলে তা দ্রুত নিকটস্থ ব্যাংক শাখা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসে দেখান; ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিসকে জানাতে দ্বিধা করবেন না।
-
সামাজিক প্ল্যাটফর্মে অপ্রমাণিত গুজব ছড়াবেন না; যেকোনো তথ্য আগে যাচাই করে শেয়ার করুন।
-
স্থানীয় বাজার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি — টেলিসম, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বাজার কমিটির মাধ্যমে নির্দেশনা ও তালিম দেয়া যেতে পারে।
-
কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রমান ও ফলাফল জনসাধারণের কাছে তোলার জন্য বলা হচ্ছে—যাতে অনিশ্চয়তা দ্রুত কাটানো যায়।
সংবাদিক দাবির প্রতি সংরক্ষণশীল নোট
এখানে উল্লেখ করা জরুরি—জুলকারনাইনের পোস্ট ও কিছু গণমাধ্যম রিপোর্টে যে বড় সংখ্যা (প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা) উল্লেখ করা হয়েছে, তা এখনই প্রমাণিত তথ্য হিসেবে স্বীকৃত নয়; সেটি একটি সরবরাহকৃত দাবি। সংবাদমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিবিধ পর্যায়ে সূত্র যাচাই চলছে। তাই পাঠক ও জনগণকে তথ্যগুলো গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করে, সরকারি ঘোষণা বা তদন্ত-প্রতিবেদনও লক্ষ্য রাখতে বলা হচ্ছে।
শেষ কথা (মানবিকভাবে)
অর্থনীতির স্বাভাবিকতা ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের নিরাপত্তা হলো জাতীয় স্থিতিশীলতার মূল অংশ। কোনো ধরনের মুদ্রানকল ও অর্থনৈতিক নাশকতার অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তার প্রভাব সরাসরি দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর পড়ে—যারা আর্থিক মুঠোয় সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য। তাই দ্রুত, স্বচ্ছ ও পেশাদার তদন্তের মাধ্যমে জনগণের চোখে আস্থা ফেরানো এবং সম্ভাব্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। প্রশাসন ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর এমন দায়িত্বশীল ভূমিকার পাশাপাশি গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ—সবার সমন্বিত সচেতনতা এখন সবচেয়ে জরুরি।
পাঠকের মন্তব্য