বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজে সঞ্চয়পত্র এখন এক অনন্য নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম। সংসারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা, নিয়মিত মুনাফা এবং তুলনামূলকভাবে ব্যাংকের চেয়ে বেশি লাভ—এসব কারণে সঞ্চয়পত্র দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শুধু বিনিয়োগ নয়, অনেক পরিবার সংসার খরচ চালাতে কিংবা সন্তানের পড়ালেখা ও চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় মেটাতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করছেন।
জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ধরন
বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চারটি প্রধান সঞ্চয়পত্র রয়েছে—
-
পরিবার সঞ্চয়পত্র
-
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
-
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
-
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
প্রতিটির মুনাফার হার কাছাকাছি হলেও কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও শর্ত রয়েছে। তাই বিনিয়োগের আগে শুধু সুদের হার নয়, শর্ত ও সীমাবদ্ধতাও বিবেচনা করা জরুরি।
মুনাফার হার (সেপ্টেম্বর ২০২৫ অনুযায়ী)
গত জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সামান্য কমানো হয়েছে। এখন হারগুলো হলো—
-
পরিবার সঞ্চয়পত্র
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে: ১১.৯৩%
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার ওপরে: ১১.৮০%
-
-
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে: ১১.৯৮%
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার ওপরে: ১১.৮০%। বর্তমানে সর্বোচ্চ মুনাফা এই সঞ্চয়পত্রে।
-
-
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে: ১১.৮৩%
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার ওপরে: ১১.৮০%
-
-
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে: ১১.৮২%
-
সাড়ে ৭ লাখ টাকার ওপরে: ১১.৭৭%
-
মনে রাখতে হবে, মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙলে মুনাফা কমে যাবে। তাই জরুরি প্রয়োজনে ছাড়া ভাঙা ঠিক নয়।
বিনিয়োগ সীমা ও যোগ্যতা
-
পরিবার সঞ্চয়পত্র
-
সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা
-
প্রাপ্তবয়স্ক নারী, প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ, এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব নাগরিকরা কিনতে পারবেন।
-
-
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
-
সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা
-
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সেনা সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা মৃত চাকরিজীবীর পরিবার।
-
-
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
-
ব্যক্তিগতভাবে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা
-
যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা
-
প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত।
-
-
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
-
একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা
-
যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা
-
প্রতিষ্ঠান ও ফার্মের জন্য নির্ধারিত সীমা ৫০ কোটি ও ২ কোটি টাকা পর্যন্ত।
-
অনাথ আশ্রম, অটিস্টিক সহায়ক প্রতিষ্ঠান ও প্রবীণদের আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা।
-
কোথায় পাওয়া যায়
জাতীয় সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়—
-
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর
-
বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা
-
বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা
-
ডাকঘর
উপসংহার
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বিশেষত মধ্যবিত্তরা ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা ও নিরাপত্তার জন্য সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিচ্ছেন। সরকারও সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে এ খাতকে জোরদার করছে। তবে বিনিয়োগের আগে শর্ত ও সীমাবদ্ধতা ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।
পাঠকের মন্তব্য