বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধেই হবে এ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন (ইসি)ও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে চলছে তোড়জোড়।
তবে এই প্রক্রিয়াতেই তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের দীর্ঘদিনের দাবি— শাপলা প্রতীক না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এনসিপির অধিকাংশ নেতা অভিযোগ করেছেন, শাপলা প্রতীক ছাড়া তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ও ভোটারদের কাছে পরিচিতি কঠিন হয়ে পড়বে। সরল পথে দাবি আদায় সম্ভব না হলে রাজনৈতিক লড়াইয়ের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
গত মঙ্গলবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এক পোস্টে লেখেন—
“জাতীয় নাগরিক পার্টিকে শাপলা প্রতীক না দিলে নির্বাচন কিভাবে হয়, তা দেশবাসী দেখবে।”
তার এই হুঁশিয়ারি দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, প্রতীক ইস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থান
এনসিপির হুঁশিয়ারির প্রতিক্রিয়ায় সরকারের উচ্চপর্যায়ে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন—
“কোনো নেতা কী স্টেটমেন্ট দিচ্ছে, আমরা সেটা দেখছি না। নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে। পৃথিবীর কেউ নেই যে এটা বানচাল করতে পারবে।”
তিনি আরও জানান, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত। কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে না।
মানবিক দৃষ্টিকোণ
প্রতীক শুধু একটি নির্বাচনী চিহ্ন নয়; এটি ভোটারদের মনে দলের অস্তিত্ব, নীতি ও লক্ষ্যকে ধারণ করে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এখনও প্রার্থীর নামের চেয়ে প্রতীক চিনেই ভোট দেন। এই কারণে এনসিপির দাবি অমূলক নয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রতীক বঞ্চনা শুধু একটি দলের ক্ষোভ নয়, এটি ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকারেও প্রভাব ফেলতে পারে। একটি দলের রাজনৈতিক স্বপ্ন যদি প্রতীক হারিয়ে ভেঙে পড়ে, তবে সেটি জনগণের প্রতিনিধিত্বে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে। আর এই সীমাবদ্ধতা সমাজে হতাশা ও বিভাজনের জন্ম দিতে পারে।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমান সুযোগ তৈরি করা। স্বচ্ছতা, আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি না হলে নির্বাচন নিয়ে মানুষের আশা ভেঙে যাবে। অথচ গণতন্ত্র মানুষের আশা ও বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।
উপসংহার
বাংলাদেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক ইভেন্ট নয়— এটি দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ও ক্ষোভকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেমন জরুরি, তেমনি নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব হলো আস্থা ফিরিয়ে আনা।
শাপলা প্রতীক হোক বা অন্য প্রতীক— প্রতিটি দলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। কারণ একটি নির্বাচন তখনই সফল হয়, যখন প্রতিটি নাগরিক মনে করেন— “আমার ভোটের মূল্য আছে।”
পাঠকের মন্তব্য