বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় পর অবশেষে এক বড় সাফল্যের মুখ দেখলো বাংলাদেশ। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) থেকে পাচার হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ আইনি লড়াই ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে এই অর্থ বাজেয়াপ্ত হয় এবং তা দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির পর অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল। বছরের পর বছর আইনি জটিলতা ও তদন্ত শেষে অবশেষে সেই অর্থ বাজেয়াপ্ত হলো। এখন তা ফেরত আনার কার্যক্রম চলছে।”
রিজার্ভ চুরির ঘটনা: এক নজরে
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে দুর্বৃত্তরা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট কোড ব্যবহার করে আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেয়। সেখান থেকে বেশিরভাগ অর্থ ফিলিপাইনে পাচার হয়, যা পরে ক্যাসিনো শিল্পে প্রবাহিত হয় বলে প্রমাণ মেলে।
এ ঘটনার পর পুরো দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এটি অন্যতম বড় সাইবার হ্যাকিং ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়।
আইনি লড়াই ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
২০১৬ সালের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। মামলায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) ও তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশকে ফিলিপাইনের আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন, ব্যাংকিং নীতি ও সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত জটিলতা অতিক্রম করতে সময় লেগেছে বহু বছর। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, আইনজীবী এবং ফিলিপাইন সরকারের সহযোগিতায় অবশেষে এই অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়।
দেশের ভেতরের সংশ্লিষ্টতা
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের ভেতরের কিছু চক্রের সহায়তা ছাড়া এত বড় হ্যাকিং সম্ভব ছিল না। তদন্ত সংস্থাও একই ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত আসল অপরাধী চক্রের সম্পূর্ণ পরিচয় উদঘাটিত হয়নি।
জাতির জন্য আশার বার্তা
রিজার্ভ চুরির মতো এক অভূতপূর্ব ঘটনার কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছিল, সাধারণ মানুষও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন। বাজেয়াপ্ত হওয়া এই অর্থ ফেরত আসা কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিক থেকেও বড় একটি অর্জন।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়াও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে।
পাঠকের মন্তব্য