কে তিনি—এবং কেন এই অনন্য উপাধি?
কিরণ মজুমদার-শ’ (জন্ম ১৯৫৩, বেঙ্গালুরু) ভারতের একজন স্বনির্মিত নারী বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা এবং বায়োটেকনোলজি খাতের পথপ্রদর্শক। তিনি বায়োকন (Biocon)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারপার্সন—যা ভারতের অন্যতম প্রধান বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি।
তাঁর গল্প শুরু হয়েছিল একেবারেই ভিন্ন জায়গা থেকে: বিয়ার ব্রুয়িং (Brewing) থেকে।
জীববিদ্যা (Zoology) পড়ার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে মাস্টার ব্রিউয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু ভারতে ফিরে আসার পর লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে কোনো ব্রুয়ারি তাঁকে চাকরি দিতে রাজি হয়নি।
হতাশ না হয়ে কিরণ ১৯৭৮ সালে নিজের উদ্যোগে বায়োকন প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট্ট একটি গ্যারেজে শুরু করা এই কোম্পানিতে তিনি বিয়ারের জন্য শেখা ফারমেন্টেশন কৌশল ব্যবহার করেন এনজাইম উৎপাদনে। সেখান থেকেই শুরু তাঁর “ব্রিউমাস্টার থেকে বায়োটেক টাইকুন”-এ রূপান্তর।
ছোট্ট গ্যারেজ থেকে বৈশ্বিক বায়োটেক শক্তি
-
প্রথম পদক্ষেপ: মাত্র ₹১০,০০০ টাকা (প্রায় $120) মূলধন এবং কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করেন বায়োকন।
-
বড় সাফল্য: টিনের ছাউনি দেওয়া শেড থেকে কাজ শুরু করেও বায়োকন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এনজাইম রপ্তানি করা ভারতের প্রথম কোম্পানি হয়ে ওঠে।
-
ব্যবসায়িক মাইলফলক: ১৯৮০-এর দশকে ইউনিলিভার (Unilever) বায়োকনের এনজাইম ব্যবসা কিনে নেয়। পরবর্তীতে কিরণ সেটি আবার $২ মিলিয়নে কিনে নেন এবং ২০০৭ সালে $১১৫ মিলিয়নে বিক্রি করেন।
-
বায়োলজিকসে প্রবেশ: ২০০০ সালে বায়োকন ইনসুলিন উৎপাদন শুরু করে। ইয়িস্ট ফারমেন্টেশন ব্যবহার করে ইনসুলিনের দাম ভারতের বাজারে সাশ্রয়ী করে তোলা হয়।
-
বৈশ্বিক নেতৃত্ব: বর্তমানে বায়োকনের বার্ষিক আয় প্রায় $১.৯ বিলিয়ন এবং এর মধ্যে ৫৫% এরও বেশি আসে বায়োলজিকস বিভাগ থেকে।
-
উদ্ভাবন: বায়োকন বাজারে সাশ্রয়ী বায়োসিমিলার এনেছে—যেমন Stelara, Humira, Herceptin-এর বিকল্প ওষুধ। উদাহরণস্বরূপ, তাদের Yesintek (Stelara-র বায়োসিমিলার) প্রতিটি ডোজ মাত্র $৩,০০০-এর কম, যেখানে আসল Stelara-এর দাম $২৫,০০০ এরও বেশি।
-
বৈশ্বিক প্রসার: বর্তমানে বায়োকনের বায়োলজিকস বিক্রির প্রায় ৪০% আসে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে।
প্রভাব ও উত্তরাধিকার
-
নেট ওয়ার্থ: ২০২৫ সালে কিরণের সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক $৩.১–৩.২ বিলিয়ন।
-
উদ্ভাবন ও সুলভ ওষুধ: তাঁর উদ্যোগে উন্নয়নশীল দেশগুলোর লাখো মানুষের কাছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
-
নারী পথিকৃৎ: তিনি ভারতের বায়োটেক শিল্পে নারীর অগ্রদূত, যিনি পুরুষপ্রধান ক্ষেত্রকে ভেঙে দিয়ে বিশ্বমানের বায়োফার্মা সাম্রাজ্য গড়েছেন।
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ
বৈশিষ্ট্য | তথ্য |
---|
পাঠকের মন্তব্য