এফএও’র সমাপনী কর্মশালা: বিপজ্জনক খালি কীটনাশকের প্যাকেজিং বর্জ্য নিরাপদ নিষ্পত্তি বিষয়ক মিনি পাইলটের সফল সমাপ্তি
২০ আগস্ট ২০২৫, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ – জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বিপজ্জনক খালি কীটনাশক কনটেইনার (EPC) সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও নিষ্পত্তির উপর পরিচালিত মিনি পাইলট কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার নাহার গার্ডেনে আয়োজিত সমাপনী কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। এফএও’র গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (GEF) অর্থায়িত “বাংলাদেশে কীটনাশক ঝুঁকি হ্রাস” প্রকল্পটি ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মিনি পাইলট কার্যক্রম শুরু করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল কৃষি খাত থেকে উৎপন্ন ক্রমবর্ধমান বিপজ্জনক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। আট মাসব্যাপী এ উদ্যোগে মোট ১.৩৬ টন কীটনাশকের খালি প্যাকেট সংগ্রহ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এফএও বাংলাদেশের সিনিয়র টেকনিক্যাল ও নীতিগত উপদেষ্টা মার্টেইন ভ্যান ডে গ্রুপ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উপপরিচালক (ডিডি) ড. রোবিয়াহ নূর আহমেদ এবং সাটুরিয়ার ইউএও, ডিএই মোস্ত. তানিয়া তাবাসসুম, যিনি অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল জাত (HYVs) ও হাইব্রিড ফসলের বিস্তার এবং উচ্চমূল্যের শাকসবজি ও ফল উৎপাদনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কীটনাশকের ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাটুরিয়ার কৃষক ও কীটনাশক বিক্রেতাদের স্বেচ্ছায় খালি কনটেইনার সংগ্রহ ও নির্ধারিত স্থানে জমা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানিদূষণ রোধ, বন্যপ্রাণী রক্ষা, বায়ুদূষণ কমানো, পুনর্ব্যবহারকে উৎসাহিত করা ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে, যা কৃষক, পরিবার ও ফসলকে সুরক্ষা দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
মার্টেইন ভ্যান ডে গ্রুপ বলেন, “গত আট মাসে এফএও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে মিলে সাটুরিয়ার কৃষক ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ কৃষি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে এবং বাস্তব জীবনে তা বাস্তবায়নেও সহায়তা করেছে। আমরা তাদের সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেছি এবং বিপজ্জনক কীটনাশক বর্জ্য নিরাপদে অপসারণের জন্য একটি কার্যকর মডেলও বাস্তবায়ন করেছি। এই পাইলট শেষ হলেও আমরা ভবিষ্যতে ডিএই ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে মিলে এই প্রচেষ্টা আরও সম্প্রসারিত করতে চাই।”
ড. রোবিয়াহ নূর আহমেদ বলেন, “দায়িত্বশীলভাবে কীটনাশক ব্যবহারই খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন এবং কৃষকের সুস্থতার চাবিকাঠি। তবে অনিয়ন্ত্রিত বিক্রয় এখনো ঝুঁকি তৈরি করছে। শক্তিশালী মনিটরিং, শিক্ষা ও নিয়ম মেনে চলা এখন অপরিহার্য। একটি সশুল্ক সংগ্রহ ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই নিরাপদ বর্জ্য নিষ্পত্তিতে সহায়তা করছে। অবশিষ্টাংশ কমানো গেলে বাংলাদেশ কৃষিজাত রপ্তানি বাড়াতে পারবে। সচেতনতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি।”
২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ডিএই ও এফএও’র উদ্যোগে ১৩০০ জন কৃষক, ১০০ জন কীটনাশক বিক্রেতা এবং ৩০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (SAAO) কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষক পরিবারকে সচেতন করতে ১০টিরও বেশি উঠান বৈঠক আয়োজন করা হয়। এ সময়ে ৩০,০০০টিরও বেশি প্রচার সামগ্রী (আইইসি ম্যাটেরিয়াল) এবং ৫,০০০টির বেশি সুরক্ষা সামগ্রী (দস্তানা, গগলস, এপ্রোন, ব্যাগ, বিন ইত্যাদি) বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য দুটি সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করা হয়, যা ভবিষ্যত কর্মসূচিতেও ব্যবহৃত হবে।
মিনি পাইলট ইনিশিয়েটিভ – সংক্ষেপে:
কৃষক ও কীটনাশক বিক্রেতাদের মধ্যে ঝুঁকি ও নিরাপদ বর্জ্য নিষ্পত্তি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি
কৃষকরা বর্জ্য ব্যাগ বা ডাস্টবিনে জমা রাখে
কৃষকরা বর্জ্য কীটনাশক বিক্রেতার দোকানে জমা দেয়
সংগ্রহকেন্দ্রে বর্জ্য পরিবহন
সংগ্রহকেন্দ্র থেকে লাফার্জ সিমেন্ট শিল্পে পরিবহন করে দহন (ইনসিনারেশন)
দহন শেষে ছাইয়ের নিরাপদ নিষ্পত্তি
কৃষি খাতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি
এই মিনি পাইলট কার্যক্রম বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার মান উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কৃষক, সরকারি কর্মকর্তা ও শিল্প সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় এ উদ্যোগ ভবিষ্যতে দেশব্যাপী সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষিতে এফএও’র অঙ্গীকার
“বাংলাদেশে কীটনাশক ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্প” এর মাধ্যমে এফএও, বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছে যাতে বিপজ্জনক কীটনাশক ব্যবহারজনিত পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যায়। খালি কীটনাশক কনটেইনার বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ কৃষি চর্চা, পরিষ্কার পরিবেশ এবং টেকসই কৃষি নিশ্চিত হচ্ছে। এ প্রচেষ্টা এফএও’র “ফোর বেটারস”— বেটার প্রোডাকশন, বেটার নিউট্রিশন, বেটার এনভায়রনমেন্ট এবং বেটার লাইফ— বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
তথ্যসূত্র: FAO, Bangladesh
পাঠকের মন্তব্য