দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত মানচিত্রে চীন ও ভারতের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। সীমান্ত সংক্রান্ত বিবাদ, আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভূরাজনীতির কারণে দু’দেশের সম্পর্ক বছরের পর বছর টানাপোড়েনে রয়েছে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ ভারতের অবস্থানকে প্রভাবিত করেছে এবং কৌশলগত দিক থেকে চীনের দিকে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে নয়াদিল্লিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের সময় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তপ্ত ও ঘনিষ্ঠ ছিল। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নজর কাড়ে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ক্রয়কে কেন্দ্র করে সম্পর্কের তত্ত্বাবধানের মধ্যে এসেছে নতুন অবস্থা। দিল্লির ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের অর্থনীতি ও কৌশলগত সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে মোদি আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিতব্য সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সফর ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য মোদি এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
ভারত-চীনের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত, হিমালয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ এবং পাকিস্তানে চীনের কৌশলগত উপস্থিতি এখনও গভীর অবিশ্বাস তৈরি করেছে। তবে সম্প্রতি উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনঃসচল করা, নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা পুনঃইস্যু এবং পশ্চিম তিব্বতে তীর্থস্থান পুনরায় খোলা চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ধীরে ধীরে স্বাভাবিককরণের দিকে নিয়ে গেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মোদিকে সম্মেলনে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, তিয়ানজিন সম্মেলন হবে ঐক্যের, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপ ভারতের কৌশলগত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে এবং দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকছে। ভারতের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, দেশের কৃষক, মৎস্যজীবী ও দুগ্ধখামারিদের স্বার্থে কোনো আপস করা হবে না। মিলান বৈশ্নাভের মতে, ভারতের এমন কৌশলগত পদক্ষেপ ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও দৃঢ় করতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য চরম আস্থাহীনতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। যদিও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে শক্তিশালী, তথাপি শুল্কারোপের কারণে নয়াদিল্লি এখন নতুন কৌশলগত সমীকরণ তৈরি করছে।
এই পদক্ষেপে চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন আস্থা ও সহযোগিতার সূচনা হতে পারে। এর পাশাপাশি, রাশিয়ার তেলের উপর ভারতীয় ক্রয়, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও পর্যটন ভিসা পুনরায় চালু, এবং সীমান্তে সংঘাত নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া কৌশলগত স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী কয়েক মাসে মোদি-চীন বৈঠক এবং ভারতের কৌশলগত পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ ও চীনের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন ভারতকে নতুন কৌশলগত দিক নির্দেশ করবে।
পাঠকের মন্তব্য