মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আগামী ১৭ আগস্ট পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বুধবার (৬ আগস্ট) দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ সিদ্ধান্ত দেন।
আজকের শুনানিতে সাক্ষ্য দেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী রিনা মুরমু এবং এনটিভির রংপুর প্রতিনিধি এ কে এম মঈনুল হক। তারা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড–যা মামলার মূল অভিযোগগুলোর একটি–সম্পর্কিত তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেন। এর আগে, একই মামলায় আরও তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন মিজানুল ইসলাম এবং অন্য প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষের মধ্যে পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। একইসঙ্গে, গ্রেফতার হয়ে আদালতে হাজির থাকা সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে, সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার হিসেবে) রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করে।
এর আগে, ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আদালতে হাজির করতে দুইটি পত্রিকায় (বাংলা ও ইংরেজি) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও তারা আদালতে হাজির হননি। ফলে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হয়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০২৫ সালের ১ জুন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি পৃথক মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলাই ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেটিকে ‘মিস কেস’ হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
এই মামলার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি মামলায় দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে গুম, খুন ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে, অন্য মামলাটি দায়ের হয়েছে ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের অনুগত প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ যেভাবে গণহত্যা, গুম ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটায়—তা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়ে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য