ঢাকা, ৬ আগস্ট:
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ অনুষ্ঠিত এক সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের মিশনপ্রধান আন্দ্রে কার্সটেন্স। এই সাক্ষাৎকালে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অগ্রগতি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
এ সময় এক ব্যতিক্রমী উপহার দেন রাষ্ট্রদূত: নিজের লেখা ও গাওয়া একটি গান, যা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নবজাগরণ নিয়ে রচিত। গানটির সুর নেওয়া হয়েছে জর্জ হ্যারিসনের কিংবদন্তি গান “Bangla Desh” থেকে।
ডাচ দূতের প্রশংসা ও মূল্যায়ন
-
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে কার্সটেন্স বলেন, “পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সময় অত্যন্ত দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সামাল দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা।”
-
তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আপনার ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মানুষ আপনাকে মনে রাখবে।”
‘জুলাই ঘোষণা’-কে তিনি “একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক” আখ্যা দেন। তার মতে, এটি একদিকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে ধারণ করে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের প্রত্যাশাকে সেতুবন্ধন করে।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। এটি দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।”
রোহিঙ্গা সংকট ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন
সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হয়। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হবে রোহিঙ্গাদের মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের সমাধান।
‘জুলাই বিপ্লব’-কে নিবেদিত গানটি উপহার
কার্সটেন্স একটি ভিডিওসহ রেকর্ডেড গান উপহার দেন, যা তিনি নিজেই লিখেছেন ও গেয়েছেন। গানটির শব্দচয়ন বাংলাদেশে জেনারেশন-জি (Generation Z)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ ও মানুষের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে উৎসর্গ করা হয়েছে।
গানের কিছু অংশ (মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ):
বাংলাদেশ, বাংলাদেশ
বন্ধুসুলভ মানুষদের দেশ, তারা ভালো করছে
বিপ্লবের মাধ্যমে খুলেছে পথ
তাদের অধিকারের কথা বলার জন্য
এটা কেবল কল্পনা নয়, একটি পবিত্র গাঁথা
বাংলাদেশের মানুষের জন্য চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষা।
বাংলাদেশ, বাংলাদেশ
বঙ্গোপসাগরের তীরে এক নব-জীবনের উত্থান
বিপ্লবের মাধ্যমে খুলেছে পথ
বহু বছর বিভ্রান্তির পর
জেন-জি দেখিয়েছে পথ
দুঃস্বপ্নকে দিনে পরিণত করেছে।
এই গানটি “জুলাই বিপ্লব” ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতীক হিসেবে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সম্প্রচারের জন্য জমা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে
সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
উপসংহার
এই ব্যতিক্রমী বিদায়ী সাক্ষাৎ আন্তর্জাতিক কূটনীতির সৌহার্দ্যপূর্ণ রূপ তুলে ধরে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে লেখা একটি কূটনীতিকের গান শুধু রাজনৈতিক শ্রদ্ধাবোধ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনার একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য