জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আজ শুক্রবার বিকেল চারটা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মঞ্চে আসেন অধ্যাপক ইউনূস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি আলী রীয়াজ।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
নিরাপত্তা ও পরিস্থিতি
বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে দুপুর থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন।
বিকেলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের প্রবেশপথে সেনা সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। কয়েক ঘণ্টা স্থবির থাকার পর আশপাশের এলাকায় যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়, যদিও অ্যাভিনিউয়ে চলাচল ছিল সীমিত।
বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ
অনুষ্ঠান শুরুর আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে একদল বিক্ষোভকারী দুপুরে দক্ষিণ প্লাজায় অবস্থান নেয়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
দুপুর পৌনে ২টার দিকে এমপি হোস্টেলের সামনে টিয়ারে শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর ও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার দিনে এ ধরনের ঘটনা বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। এটি ঐক্যের বার্তা নয়।”
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “জুলাই যোদ্ধাদের দাবি বিবেচনায় নিয়েই সনদে সংশোধন আনা হয়েছে। এখন তাঁদের উদ্বেগের কারণ থাকার কথা নয়।”
সনদে সংশোধন ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিক্ষোভের মুখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আজ দুপুরে জুলাই সনদের পঞ্চম দফায় সংশোধন আনে। কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এখানে কিছু ভিন্নমত থাকলেও গণতন্ত্রের পথে এটি একটি শক্ত যাত্রা শুরু করবে, যদি অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়িত হয়।”
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আইনি ভিত্তি না পাওয়া পর্যন্ত সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছে। বাম ধারার চারটি দল—সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—সংশোধিত খসড়া হাতে না পেলে সই করবে না বলে জানিয়েছে।
আবহাওয়া ও বিলম্ব
বিকেলে রাজধানীতে এক দফা বৃষ্টি হয়েছে, আকাশ ছিল মেঘলা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান কিছুটা বিলম্বিত হয়। বিকেল ২টা ৫৮ মিনিটে নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেন, “সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। আমাদের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা দেখার অপেক্ষায়।”
পাঠকের মন্তব্য