২৫ সেপ্টেম্বর ওভাল অফিসে ঘটে যাওয়া ঘটনা কয়েক বছর আগে কল্পনাও করা যেত না। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বসেছিলেন, আর অপর পাশে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প অতিথিদের উদ্দেশ্যে প্রশংসা করে বলেছিলেন, “খুব দারুণ মানুষ।”
এ বছর মুনিরের জন্য এটি ছিল হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বারের বৈঠক। কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধান এমন মর্যাদা পাননি। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটি ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত। একসময় অবিশ্বস্ত ও সমাজচ্যুত দেশ হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান এখন আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে পুনর্বাসন পাচ্ছে।
ট্রাম্পই সেই প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রথম মেয়াদে পাকিস্তানকে ‘মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া কিছু দেয়নি’ বলে সমালোচনা করেছিলেন এবং সামরিক সহায়তা বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে এখন সম্পর্ক দ্রুত ঘুরে গেছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় উপেক্ষার পাত্র হওয়া পাকিস্তানের সেনা নেতৃত্ব এখন সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের এই পরিবর্তন নতুন কোনো নৈতিকতা বা কৌশলগত পরিকল্পনার ফল নয়; বরং এটি ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসারে কার্যকর পদক্ষেপের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মোহাম্মদ শরিফুল্লাহর গ্রেপ্তার, যিনি ২০২১ সালে কাবুলে বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছিলেন। মার্কিন সেনা ১৩ জন নিহত হওয়া ওই হামলার বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারকে ট্রাম্প প্রশাসন একটি সাফল্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘর্ষের পর ইসলামাবাদ ট্রাম্পের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপকে শান্তি স্থাপনের কারণ হিসেবে স্বীকার করেছে। ওয়াশিংটনের জন্য সরাসরি পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে কাজ করা সুবিধাজনক, কারণ এটি দেশের প্রকৃত ক্ষমতার কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ দেয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও পাকিস্তানের বিরল খনিজ ও তেল অনুসন্ধান, এবং ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকল্প–সহ বিভিন্ন চুক্তি আলোচনায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক ধার্য করছে, যা এই অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের জন্য এই আমেরিকান আলিঙ্গন দেশটিকে কূটনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করছে এবং ইসলামাবাদকে বিশ্বদ্বয় পরাশক্তির সঙ্গে সমন্বয় করার সুযোগ দিচ্ছে। তবে এটি পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সমর্থকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের নীতি পাকিস্তানকে একদিকে নিরাপত্তা প্রদান করছে, অন্যদিকে ভারতের ওপর অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন চুপচাপ মেরামতের চেষ্টা করছে, আর ইসলামাবাদের পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও শক্তি সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
ওভাল অফিসে ট্রাম্পের মন্তব্য “খুব দারুণ মানুষ” হতে পারে মুহূর্তের প্রশংসা, কিন্তু ইতিহাস দেখায় যে, এই রোলারকোস্টারের পরবর্তী ঢাল খুব কাছেই।
পাঠকের মন্তব্য