আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সংস্কারভিত্তিক নির্বাচন না হলে দেশ আরও বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
“সংস্কার ছাড়া নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে”
ডা. তাহের বলেন,
“ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া দরকার। তবে একটা যেনোতেনো নির্বাচন দিয়ে তো সমস্যার সমাধান হবে না। নির্বাচন তো ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালেও হয়েছে। কিন্তু তাতে সংকট কমেনি, বরং বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমাদের দেশের জন্য এখন একটি গণতান্ত্রিক, জন প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দেওয়া মানে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা।”
তার মতে, রাজনৈতিক সংস্কারের প্রশ্নে আর সময়ক্ষেপণ করা মানে জাতির ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলা।
“ষড়যন্ত্র চললে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া যদি নির্বাচন দেওয়া হয়, তাহলে সবকিছুই প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে।”
রাজনৈতিক ঐকমত্য ও আইনি বাস্তবায়নের আহ্বান
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন,
“এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। তার আগে স্বল্প সময়ের মধ্যেই যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোকে আইনি ভিত্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তিনি মনে করেন, এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত না হলে নির্বাচন কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে।
“দেশে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস তৈরি করতে হবে।”
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি
ডা. তাহের বলেন,
“যারা এই সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন, কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে যে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে—তাতে যদি নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তাদেরই জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
তার মতে, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্ব কেবল রাজনৈতিক দলের নয়—এটি একটি জাতীয় দায়িত্ব।
“আজ যদি আমরা সংস্কারের পথে না যাই, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।”
যুক্তরাষ্ট্র সফর ও স্বাস্থ্যগত প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যান।
তার সফরসঙ্গী ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আখতার হোসেন, এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।
সবাই দেশে ফিরেছেন, তবে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস চিকিৎসার প্রয়োজনে এখনও শিকাগোতে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে, কিডনি জটিলতায় ভোগা ডা. তাহের গত এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেও তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
তবে অসুস্থ শরীর নিয়েও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি—যা তাঁর মানবিক ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের প্রতিফলন বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, ডা. তাহেরের এই বক্তব্য মূলত নির্বাচন-পূর্ব সংস্কার বাস্তবায়নে এক ধরনের সতর্কবার্তা।
দেশে বর্তমানে যে অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে, তার সফলতা নির্ভর করছে এই সংস্কারগুলো কত দ্রুত এবং কতটা আন্তরিকভাবে বাস্তবায়িত হয় তার ওপর।
তাঁর মন্তব্যে যে বার্তা স্পষ্ট—সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়, অংশগ্রহণ ছাড়া সমাধান নয়।
পাঠকের মন্তব্য